বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

সোনালী মিত্রের কবিতা,'প্রলাপ'

প্রলাপ

সোনালী মিত্র

নেশা নিয়ে চিরটাকাল আমার জব্বর কৌতূহল ছিলো।উদয়াস্ত সারা পৃথিবী নেশার দিকে খুলে রাখে তার রহস্যগহীন সাম্রাজ্য।আমার সুব্রাহ্মণ পিতা,মান্ধাতা গোঁড়ামি নিয়ে ধর্মীয় ধ্বজার দিকে খুলে রাখলেন নেশাজাত সম্পান।ঘরে ভরে যাওয়া জমানো ঈশ্বর আর ভিখারির অভুক্ত চোখের মধ্যে কোন পার্থক্য রেখা টানতে পারেননি বলেই তার সংসারে অনটনের ছাপ স্পষ্টভাবে ছায়াছবি হয়ে উঠেছিলো। ।বিদেশ বিভূঁই থেকে সংগৃহীত ঈশ্বরশালায় ওষ্ঠাগত তখন আমাদের গার্হস্থ্য কোলাহল।
কেউ ডাক টিকিট জমান কেউ বা প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহের মোহে আবিষ্ট হয়ে তাজা খুনে রাঙিয়ে ফ্যালেন হাত।

কেউ বা চাঁদ -তারার পাশে বসিয়ে রাখেন কল্পনানগরীকে স্বপ্নবিভোর অবস্থানে।আমার প্রেমিক দাদার অবশ্য নেশা ছিলো প্রেমপত্র গচ্ছিত করে রাখার।অন্ধকার দেরাজের মধ্যে সেইসব সুগন্ধি গুলজার আলো হয়ে ফুটে থাকতো।তার প্রথম প্রেমিকা এক আদিবাসী রমণী ছিলো।তার কালো ডাইনামাইট শরীর থেকে গড়িয়ে আসতো বুনোফুলের ঘ্রাণ,কুন্দদাঁতে লেগে থাকতো পদ্মগোখরোর মাংসপোড়া ধোঁয়া ।মেয়েটি আমাদের বাড়িতে আসতো মায়ের বাতের ব্যথার উপশমে , নীলশেয়ালের তেল বেচতে।মেয়েটি ভাঙাচোরা হরফে দাদার চোখে রেখে যেতো শৃঙ্গারসিদ্ধ কামিনীদুপুর।সেই প্রথম জমানো শুরু প্রেম এবং নেশার।কলেজে পড়ার সময় এক সুন্দরী পারিজাত, স্বর্গীয় সরোবর থেকে ছিঁড়ে আনলো দাদা।মাঝরাতে বাড়িতে পুলিশ,দাদাকে মারতে মারতে কালোভ্যানে তুলে অজানা কুয়াশার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গ্যালো জীপটি।দাদার ডায়েরির ভাঁজে পারিজাতটি অক্ষত আছে গুঁড়ো গুঁড়ো বরফ হয়ে, যদিও তার শরীর থেকে উপচে পড়ে বাসিঘামের গন্ধ।দাদা এখন যুদ্ধবিমান ওড়ায়।ডানায় লেগে থাকে মেঘেদের বিচ্ছুরণ।তার ঠিক পাশের সিটেই থাকে বিদূষী এক মুসলিম জন্নত হুরি। ডাকবাক্স উপচিয়ে গড়াতে থাকে মধুমাস।

লোকে বলে ঠিক মায়ের মতো হয় মেয়ে।অথচ গুণোপনায় বা অগুণোপনায় কিছুতেই ছুঁয়ে দিতে পারিনি মাকে। মায়ের ছিলো নিত্য নতুন নক্সা এঁকে গয়না গড়াবার সে এক সুতীব্র নেশা।আর আমার ছিলো মাঠঘাট,ফল-ফুল,ঝড়-প্রেম সব ডিঙিয়ে এক দুষ্প্রাপ্য প্রতারণার।হয়ত বা তা ছিলো কিছুটা বংশজাত।আমার সংগ্রামী ঠাকুরদা ১৯৪৭ এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিভেদকামী রক্তের বিরুদ্ধে ভরিয়ে দিয়েছিলেন স্লোগান তার সংযুক্ত মানচিত্র আঁকা খাতায়।যুদ্ধজয়ী হয়ে ফিরে এসেছিলেন প্রায় উন্মাদ হয়ে।নশ্বর শরীরকে অস্বীকার করে প্রাধান্য পেতো নির্বিবাদ আত্মার তখনই তিনি ফ্যালা ফ্যালা করে দিতেন তুচ্ছ শরীর। ব্লেডের দিকে গড়িয়ে যেতো আত্মহত্যাপ্রধান চনমনে রক্তের স্রোত।সেই ঠাকুরদাদা একদিন নিজেই কবিতা হয়ে গেলেন,আর আমার জন্য রেখে গেলেন বদ্ধ উন্মাদ হবার যথেষ্ট সরঞ্জাম।

AIbEiAIAAABECLj104uWpPfzwQEiC3ZjYXJkX3Bob3RvKigzZWM1ZTg3NTc0ZmQ2ZjE5NjZjODA2YzgwN2YyMjY2OTJkODVhNWI2MAHPRl-6KWNSAhGu-8hmjz1WfW9TZw?sz=32ReplyForward