শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

শর্মিষ্ঠা ঘোষের পাঁচটি কবিতা

আজ অন্যদেশ স্বজন শর্মিষ্ঠা ঘোষের জন্মদিনে অন্যদেশ পরিবারের শুভেচ্ছা ও আন্তরিক শুভকামনা।



হ্যাঙ্গওভার

হ্যাঙ্গওভারের ছুতোয় নাতায় এই যে ফেরা

বুড়ি ছোঁয়ার মতই তোমায় প্রদক্ষিণে

খোলা খাতার কলম ওড়া পায়রা আমার

ভাঙ্গা খেলায় বকম বকম রোদ পড়েছে

ঠিক কবে সেই জাল কেটেছ , টের পাই নি

ঠোঁট খেয়েছে বিষম তেতো একেলাপন

মহামারী ভাবনা আমার অক্ষরেখার

স্যাটেলাইটে খবর এলো হারিয়ে গেছে

এখন যেসব যষ্টি এবং থাকার তাগিদ

তোমার মায়ায় ভরপুর সব আলগা আলগা

বাঁধন তো নয় কাছে ঘনায় যেতেও পারে

আমার হাতে মেহেদী রঙ আর ধরেনা

ভুল যে এও মিষ্টি সোনা ছদ্মবেশী

ভুল করেছি বলেই তাকে অঢেল আদর

তুমি আমার দুষ্টু মোহ রাগ কোরোনা

বিষম দূরের ঝরবাদলা আগুন দিনে



ঘর


ঘর একটি কাল্পনিক বস্তু

না ভাবলে নেই

উঠোন ছাউনি দাওয়া কিংবা ব্যালকনি ডুপ্লেক্স স্টুডিও

তাতে মানুষ আঁকতে ভুলে গেলে হানাবাড়ি

পর্বে পর্বে আলাপ বিস্তার আরোহ অবরোহ

ভিতের ওপর মায়ার পেইন্ট ইতিহাস ভূগোল

প্রথম পা ফেলা টলমল থেকে মাঝরাতের ফুটপাথ বদল

যৌনগন্ধ নিষিদ্ধ বইয়ের পোড়া ছাই সত্যনারায়ণ সিন্নি

অপেক্ষার ভাত ‘আয় খুকু আয়’ বিটোফেন সোনাটা

পকড়ের কথা বললে ভাবি ঘর মানে একটা নাম ঘিরে আদিখ্যেতা

শ্যামলী বিকেলে গবাদি পশু বা আপনজন ফিরে আসে

শাঁখ দীপ সামলে মাঠ ফেরত কোচিং

দৌড়োয় আইটির স্বপ্নে বুঁদ শহরতলি

ডালপালা গজিয়ে উড়ে যাও পাখির ছানা ঘরের দেয়াল প্রাইভেসি

সিনিয়র সিটিজেন সন্ধ্যে চোখ আশ্বস্ত হয়

হরিকে পার করতে বলার জন্য রইল আর একটা দিন




ভালোথাকা

মুষ্টিমেয় ঘটনা সম্বল থাকা না থাকায় ফারাক নেই

লাল নীল বাতি জ্বালি কারণে অকারণে

মকটেল হাসি লংড্রাইভ পিকনিক সৌখিন নেশা

বোঝাতে চাই এভাবেই আলো মানে রসে বশে থাকা

একে ওকে তাকে ঘরে ডাকি পরিচিত অর্ধেক অচেনা

বড় তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায় দু একটি উদ্দেশ্য বিধেয়

তারপর চা খাই চানাচুর বিস্কুট অকেশানে বিরিয়ানি চাপ

চিবোনোর শব্দে বোঝাই , এই তো দিব্যি বেঁচেবর্তে আছি

পকেটে গান্ধী ছাপ কাগজ থাকলে ভাবি , দু একটি দানে ধ্যানে যাক

এই বেশ ভালো আছি ভালো আছি আপেক্ষিক না থাকার দলে

হুশহাশ হুটার বাজিয়ে কেউ গেলে , আমি ফুটপাথ , আমার এগারো নাম্বার

সেও বুঝি ভালো থাকে আমাকে দেখেই

আসলেই ভালোথাকা মানে , ফুট দুই কারোর উপরে



বিজ্ঞাপন

জাহাজ ডুবিতে দেখিলে যে সকল প্রাণী জলে ঝাঁপাইয়া পলায়ণ করে তাহাদের মূষিক বলে

এমত অবস্থায় যাহারা হাল পাল পরিত্যাগ করে না , তাহারা আহাম্মক

কেহ কেহ ইহাদের সাচ্চা মরদ , বীরাঙ্গনার বাচ্চা অথবা নাবিক বলিয়াও সম্বোধন করিয়া থাকেন

আমার সকল সৃষ্টিই ‘দেশ’ এর জন্য উৎসর্গীকৃত বলিয়া বিদেশ আমাকে পোঁছে না

গেঁয়ো যোগি বলিয়া ঘরের কেহও আমাকে চেনে নাই

হাতে হেরিকেন লইয়া নিজেকে বিজ্ঞাপিত করিয়া ফিরিতেছি জোকারের শহরে



স্বর্ণযুগ



শ্লোগানগুলো হাতফেরতা হতেহতে গান হতে পারতো
ঝাঁকে ঝাঁকে গুলির আওয়াজ নাড়িয়ে দিলো বদলে দেয়াল
যা কিনা কোনো বিপ্লবের বাপের নিজস্ব ছিলোনা

আমাদের বাপ পিতেমো' টগবগে যুবককালে ফিরে যাচ্ছেন
মায়েদের মেটেহাঁড়ির গল্প যেমন শুনেছে রাইসকুকার
বিশদ হবার বিপজ্জনক অভ্যাস সিন্দুকে রেখেছেন কাল্ঠাকুর

সন্ধ্যের পর গোস্বামী বাড়ির চৌকাঠে গান বসে না
কারাযেন ছাপাখানা করেছে সেখানে আজকাল
জনশ্রুতি সেখানে ছাপা হয় স্বর্ণযুগের দিস্তে দিস্তে ইস্তেহার