মঙ্গলবার, মার্চ ১৯, ২০২৪

চলে গেলেন ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপকুমার

চলে গেলেন ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপকুমার । শত বৎসর পূর্ণ করা হল না তাঁর । ৯৮ বছর বয়সে থেমে গেল তাঁর জীবনরথ ।

বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। বলিউডের কিংবদন্তি এই অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মুম্বইয়ের পিডি হিন্দুজা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সেখানেই প্রয়াত হয়েছেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। প্রয়াণের সময় দিলীপ কুমারের স্ত্রী সায়রা বানু তাঁর পাশে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে বলিউড সহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি টুইট করেছেন বলিউডের কিংবদন্তি এই অভিনেতাকে নিয়ে।

১৯২২ সালে পাকিস্তানের পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন দিলীপ কুমার। তাঁর আসল নাম মহম্মদ ইউসুফ খান। ১৯৪৪ সালে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। সেই অর্থে জুগনু তাঁর প্রথম বক্স অফিস হিট সিনেমা। এছাড়া নায়া দওর, মুঘল-ই-আজম, দেবদাস, রাম অউর শ্যাম, আন্দাজ, মধুমতী এবং গঙ্গা-যমুনারর মতো ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। ১৯৯৮ সালে শেষবার সিনেমায় অভিনয় করেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। ১৯৬৬ সালে অভিনেত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দিলীপ কুমার। গোপী, সাগিনা ছবিতে জুটিতে কাজ করেছেন তাঁরা।

সেরা অভিনেতা হিসেবে ৮টি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন দিলীপ কুমার। সবচেয়ে বেশি পুরস্কার জেতার গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও রয়েছে তাঁর। ভারত সরকারের তরফে ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ সম্মান দেওয়া হয় দিলীপ কুমারকে। ভারতীয় সিনেমায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে 'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পান দিলীপ কুমার। ২০১৫ সালে ভারত সরকারের তরফে 'পদ্মবিভূষণ' সম্মানও দেওয়া হয় তাঁকে। ২০০০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদও ছিলেন তিনি। এমনকি ১৯৯৮ সালে দিলীপ কুমারকে নিশান-ই-ইমতিয়াজ সম্মানে সম্মানিত করে পাক সরকার।

তাকে বলা হয় বলিউডের কিং অফ ট্র্যাজেডি। সত্যজিৎ রায় বলেছেন দিলীপ কুমার আলটিমেট মেথড অ্যাক্টর। মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন, সুপার স্টার শাহরুখ, আমীর সবাই তার ভক্ত, অনুসারী। অমিতাভ তো কয়েক বার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন- বলিউডের ইতিহাস দুই ভাগে বিভক্ত- বিফোর দিলীপ কুমার অ্যান্ড আফটার দিলীপ কুমার। ছয় দশক ধরে বলিউডে মহীরুহ হয়েই অভিনয় করে গেছেন দিলীপ কুমার। তার আসল নাম মোহাম্মদ ইউসুফ খান। আজ এই কিংবদন্তি অভিনেতার ৯৫তম জন্মদিন।

১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পেশোয়ারে (বর্তমানে পাকিস্তানের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন দিলীপ কুমার। অভিনয় শুরুর আগে পুনেতে ফল বিক্রেতা হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

সে সময়ের বলিউডের স্টার অভিনেতা অশোক কুমার ছিলেন দিলীপের উপদেষ্টা। তার সুপারিশে অভিনেত্রী দেবিকা রানি দিলীপ কুমারকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। প্রতি মাসে ১২৫০ রুপি সম্মানীতে কাজ করার প্রস্তাব দেন তাকে দেবিকা। যদিও দিলীপ কুমার ভেবেছিলেন এটা বার্ষিক সম্মানী। নতুন হিসেবে এটা অনেক ছিল। এর কারণও ছিল। দেবিকা পরবর্তী সময়ে জানিয়েছেন দারুণ সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে তিনি বিরাট অঙ্কের সম্মানী দিয়ে দিলীপ কুমারকে আটকে রাখতে চেয়েছিলেন। এই দেবিকা রানিই তাকে দিলীপ কুমার নাম দেন।

60e522028c695.png

১৯৪৪ সালে মুক্তি পাওয়া জোয়ার ভাটা ছিলো দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি। তবে ১৯৪৭ সালে জুগনু তাকে প্রথম খ্যাতি এনে দেয়।

১৯৬৬ সালে দিলীপ কুমারের বয়স ছিলো ৪৪ বছর। সে সময় ২২ বছর বয়সী সায়রা বানুকে বিয়ে করেন তিনি। এই দম্পতি নিঃসন্তান। দিলীপ কুমার: দ্য সাবস্টেনস অ্যান্ড দ্য শ্যাডো নামে আত্মজীবনীতে জানান, হায়দ্রাবাদে এক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সাক্ষাতের পর আসমা রহমান নামের এক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ান তিনি। সায়রা বানুকে তালাক দিয়ে ১৯৮০ সালে ঐ মেয়েকে বিয়ে করেন। কিন্তু সে বিয়ে টেকেনি। দুই বছর পর আবার সায়রাকে বিয়ে করেন।

অভিনেত্রী কামিনি কৌশলের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল দিলীপ কুমারের। সে সম্পর্ক বেশি দূর এগোয়নি। বলিউডের সর্বকালের অন্যতম সেরা সুন্দরী মধুবালার সঙ্গেও তাঁর নাম জড়িয়েছিল । তবে দুই পরিবারের বিরোধিতার কারণে দুজনই ঐ সম্পর্কের ইতি টানেন। দিলীপ কুমারের সাথে বৈজয়ন্তিমালাকে নিয়েও গুজব উঠেছিলো। তবে দুজনই তা অস্বীকার করেন। এই জুটি বেশ কিছু সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছে।

৫০ ও ৬০-এর দশকে দিলীপ কুমারই ছিলেন সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া বলিউড অভিনেতা। ১৯৭৬ সালে অভিনয় থেকে ৫ বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান দিলীপ কুমার। ১৯৮১ সালে ‘ক্রান্তি’ ছবির মাধ্যমে পুনরায় পর্দায় ফিরে আসেন।

১৯৮০ সালে মুম্বাইয়ের শেরিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দিলীপ কুমার। এই অভিনেতা এক সময় রেসলিংয়ের খুব ভক্ত ছিলেন।

মোট ৫৭টি ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার। আর ৫টি ছবিতে তাকে অতিথি চরিত্রে দেখা গেছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত তার ২৩টি ছবি ফ্লপ করেছে। এ সময়ে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা তার ৩৪টি ছবি হিট। তার শেষ ছবি ‘কিলা’। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন রেখা। এই সিনেমায়ে তাকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা গেছে।

১৯৫৭ সালের ছবি মুসাফির-এ লতা মঙ্গেশকরের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে ‘’লাগি নেহি ছোটে রামা কাহে জিয়া যায়ে গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন।

দিলীপ কুমার আরেক সুপারস্টার রাজ কুমারের সাথে একটিমাত্র ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৪৯ সালে মুক্তি পাওয়া ঐ ছবির নাম আন্দাজ। অমিতাভ বচ্চনের সাথে দিলীপ কুমারের একমাত্র ছবির নাম শক্তি। ১৯৮২ সালে এটি মুক্তি পায়।

কোনো ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পাওয়ার কারণে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম উঠেছিলো। মোট ৮ বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান তিনি। মনোনয়ন পান ১৯ বার। প্রথম অভিনেতা হিসেবে তিনিই ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন।

১৯৭৬ সালের ছবি ‘বৈরাগ’ দিলীপ কুমারের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা শেষ ছবি। এ ছবিতে তিনটি চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। দিলীপ কুমার একটি মাত্র ছবি প্রযোজনা করেছেন। সেটির নাম ‘গঙ্গা যামুনা’।