শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

কে এই প্রতাপ চন্দ্র সারাঙ্গি

বৃহস্পতিবার যখন ভারতের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিচ্ছিলেন, তখন সবচেয়ে বেশি করতালি পড়েছিল প্রায় অপরিচিত, দেখতে শীর্ণকায় একজন মন্ত্রীর বেলায়। তিনি প্রতাপ চন্দ্র সারাঙ্গি।

নিজের রাজ্য উড়িষ্যার বাইরে তাকে খুব কম মানুষই চেনেন। তবে গত সপ্তাহে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যম জানায়, একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাওয়ার জন্য একেবারে সাধারণ পোশাকে তিনি তার বেড়ার কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। শূন্য অবস্থা থেকে বিপুল বিত্তশালী হওয়ার কাহিনী ভারতে সবসময় সাড়া জাগায়। কাজেই সারাঙ্গির কাহিনীও সেরকম তোলপাড় সৃষ্টি করলো।

কিন্তু সদ্য জনপ্রিয়তা পাওয়া এই প্রতাপ চন্দ্র সারাঙ্গি আসলে কে? খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে সারা জাগানো এই সারাঙ্গির অতীত ইতিহাস বেশি সুবিধার নয়।

১৯৯৯ সালে ভারতে একজন খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক গ্রাহাম স্টেইনস এবং তার দুই সন্তান খুন হন উন্মত্ত হিন্দু জনতার হাতে। ভারতের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কট্টরপন্থী হিন্দু গোষ্ঠী বজরং দলকে দায়ী করেন। প্রতাপ চন্দ্র সারাঙ্গি তখন এই বাজরাং দলের নেতা। তবে সরকারি তদন্তে ঐ ঘটনার সঙ্গে কোন একটি গোষ্ঠীর সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

তবে ২০০৩ সালে দীর্ঘ বিচার শেষে এই ঘটনায় মোট ১৩ জনকে সাজা দেয়া হয়। তাদের একজন দারা সিং ছিলেন বাজরাং দলের সদস্য। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। উড়িষ্যার হাইকোর্ট দু’বছর পর অবশ্য তার মৃত্যুদণ্ড রদ করে দেয়। সেই সঙ্গে আরও ১১ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে মুক্তি দেয় আদালত। কারণ তাদের সাজা দেয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সারাঙ্গি তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকরা পুরো ভারতকে ধর্মান্তরিত করার শয়তানি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

যারা তখন সারাঙ্গির সাক্ষাৎকার নেন তাদের একজন ছিলেন উড়িষ্যার সাংবাদিক সন্দীপ সাহু। সেই সাক্ষাৎকারে সারাঙ্গি যদিও খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক গ্রাহাম স্টেইনস এবং তার দুই সন্তানকে হত্যার নিন্দা করেন, ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে তিনি তার শক্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে অনড় ছিলেন।

২০০২ সালে বাজরাং দলসহ ডানপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলো উড়িষ্যা রাজ্য বিধান সভায় হামলা চালায়। এই ঘটনায় সারাঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অগ্নিসংযোগ, হামলা এবং সরকারি সম্পদের ক্ষতি করার অভিযোগও আনা হয়।

সারাঙ্গিকে মন্ত্রী করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে যে মাতামাতি, সেখানে অবশ্য এর কোন কিছুর উল্লেখ নেই। বরং তিনি কত ‘সাধাসিধে’ জীবনযাপন করেন সেটাই সবাই উল্লেখ করছেন।

সাংবাদিক সন্দীপ সাহু জানান, সারাঙ্গি তার এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার জন্য সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়ান। ভুবনেশ্বরেও প্রায়ই তাকে দেখা যায় পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চড়ে রাজ্য পরিষদের সভায় যাচ্ছেন। রাস্তার ধারের কোন সাধারণ খাবার দোকানে খাচ্ছেন। রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন।

সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে যখন সারাঙ্গি তার দুই বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন, তখন সেই লড়াইকে ডেডিড বনাম গোলিয়াথের লড়াই বলে তুলনা করা হয়।

বৃহস্পতিবার যখন তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন তার নির্বাচনী এলাকায় উৎসব শুরু হয়ে যায়। সমর্থকরা আতশবাজি পুড়িয়ে এবং মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস প্রকাশ করেন। কেউ কেউ তাকে এরই মধ্যে ‘উড়িষ্যার মোদি’ বলে বর্ণনা করতে শুরু করেছেন।

সাংবাদিকরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা তারকা বনে যাচ্ছেন তাদের বেলায় এটাই সমস্যা। কোন একটা ছবি বা কোন একজনের গল্প সেখানে মূহুর্তেই ভাইরাল হয়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করছে। এর ফলে কোন ব্যক্তি অতীতে কী করেছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনেই তাকে লোকজন নায়কে পরিণত করছে।