শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

কটন কলেজ, পর্ব -৬

।।ছয়।।

-তুমি আজ আসবে বলে খুব আশা করেছিলাম।

-ও

-আজ সারাটা দিন পড়তে পারিনি জান,কাল কী পরীক্ষা দেব বুঝতেই পারছি না।

-কেন?

-আজ সকালেই ভেবেছিলাম তুমি আসবে,সত্যিই দেখ তুমি এলে,কিন্তু কেন এত দেরি করলে?

আমি কোনো উত্তর দিলাম না।করবীর অনুরোধ এড়াতে না পেরে ওর বাড়িতে আগেও এসেছি।ওর মা ও খুব সুন্দরী এবং স্নেহশীলা।করবীর বন্ধু বলে পরিচয় করিয়ে দিতেই নিজের ছেলের মতোই আদর যত্ন করে মাঝে-মধ্যে করবীর কাছে আসা যাওয়ার প্রস্তাব দিলেন।আমি কিন্তু সেই প্রস্তাবের সুযোগ গ্রহণ করিনি।তবু করবীর কথা ফেলতে না পেরে দুই-তিনদিন এসেছি,আমি যাই না বলে সেইজন্য করবীর মা আমি গেলেই আক্ষেপ করে থাকেন।

অবশ্য এর একটি বড় অর্থ ও আছে।বিনন্দ চলিহার একমাত্র কন্যা করবী।করবীর আগে দুই দাদা আছে।একজন বিলেতে ইঞ্জিনিয়ারিঙের উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার জন্য দুই বছর হয় বিলেত গেছে।ফেরার পথে আরও দুই বছর জার্মানিতে কাটানোর কথা।বড় দাদা যদিও ইঞ্জিনিয়ার কোথাও চাকরি করে না।পিতার বিরাট ব্যবসার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী হিসেবে বাবার সঙ্গে কাজ শিখতে গিয়েই নাকি নাওয়া খাওয়ার সময় পায় না।নিজে ব্যবসা চালাতে হলে কী করবে বলা যায় না।

বাড়িতে দুটি গাড়ি।

‘সবাই যদি পায়ে হেঁটে বা সিটিবাসে কলেজে যেতে পারে আমার গাড়ির কী প্রয়োজন—এটা করবীর যুক্তি।করবী গাড়ি নিয়ে কোনোদিন কলেজ যায়নি।বাবা কলকাতা,দিল্লি থেকে এনে দেওয়া সুন্দর সুন্দর শাড়ির পাহাড় জমে উঠেছে।‘শাড়ি পরতে ভালো লাগে না,মুগার রিহা মেখলাজোড়ার মতো সুন্দর নয়’-করবী মায়ের সঙ্গে তর্ক করে।দাদারা তাকে খ্যাপায় আর বলে এমন গ্রামে তাকে বিয়ে দেবে যেখানে গরুর গাড়ি ছাড়া আর কোনো যাতায়ত ব্যবস্থা নেই।শহরের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিলে কী হবে।

অবশ্য এগুলি মজা করে বলা।কিন্তু করবীর ব্যবহার বাড়ির সবাইকে হতাশ করেছে।এত আদরের মেয়ের একী হল—

তাঁদের মনে একটাই প্রশ্ন।তথাকথিত সমাজের সঙ্গে মিলতে পারার করবীর একটাই গুণ ছিল।সে্টা হল সুন্দর গান গাইবার ক্ষমতা।কলেজেও করবীর দাম এখানেই।ফাংশন হলে করবীর গানের খবর নেওয়া ছাড়া সারা বছর কেউ তার খবর রাখে না।

তাই করবীর মা আমাকে পেয়ে খুশি হল।সেভাবে কোনো বন্ধুবান্ধব না থাকা করবী যখন আমাকে নিয়ে গিয়ে বাড়ির সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তখন প্রত্যেকেই বিস্মিত চোখে যাদুঘরের জিনিস দ্দেখার মতো করে আমাকে দেখছিল।আমাকে পেয়ে মায়ের একটাই আশা কে জানে আমার সংস্পর্শে এসে হয়তো করবীর কোনো পরিবর্তন হয়।

দাদা নাকি করবীকে আমার সঙ্গে কথা বলতে দেখে প্রথমদিন জিজ্ঞেস করেছিল,বাড়িতে কতটা জমিতে হালচাষ করে?

দাদার কৌ্তুকটা বুঝতে পেরে করবীও নাকি বলেছিল-‘চাষ অবশ্য করে,কিন্তু তোমার ভাবামতে লাঙলের সাহায্যে নয়,আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে,বাড়িতে তিনটা ট্র্যাক্টর রয়েছে,আমেরিকান ট্র্যাক্টর ও এবছর একটা এসে যাবার কথা।‘

করবী এইসব কথা একদিন আমাকে হাসতে হাসতে বলেছিল।আমি করবীর কথার কোনো প্রতিবাদ্ করিনি।করবই বা কী।করবীও আমার বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করেনি।বাড়ির এক ছেলে বলে খুব আদরের শুধু এতটুকুই জানে।

করবী মায়ের কাছে অনেক কথা নিজের মন থেকে বানিয়ে বলে।আমি নাকি মায়ের চিঠি পেতে দুদিন দেরী হলেই মন খারাপ করি পড়াশোনায় একেবারে মন বসাতে পারি না,ইত্যাদি।

‘হবেইতো,এসব ভালো ছেলেদের ব্যাপারটাই আলাদা।তোর মতো আমাদের কথা না শোনা,যা মনে আসে তাই করবে নাকি?শৈশব থেকে এত কষ্ট করে তোদের লালন পালন করে বড় করলে কী হবে,আমাদের কথা একেবারেই ভাবিস না।

করবী হাসে।আমি জানি মায়ের আক্ষেপ কোথায়।মা ও কখনও বলেন—‘তুমি ওকে বুঝিয়ে বলতো,এত ছোট মেয়েদের মতো হয়ে কীভাবে থাকে,আমার যে ভয় হয়।‘

আমি শুধু মায়ের কথায় সায় দিয়ে যাই।আমি কী বোঝাব,করবীকে আমি নিজেই বুঝতে পারিনি।করবীর সান্নিধ্যে আমিও যেন নিজেকে বুঝতে পারছি না।আমি নিজের অসহায় অবস্থাটাকে বোঝাতে পারছি না।পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধ করার সামর্থ্য আমার নেই কিন্তু পালিয়ে যাবার সাহসটাও হারিয়ে ফেলেছি।

বার বার একটা কথাই আমাকে বিরক্ত করে,আবার একটা নতুন ভুল করছি না তো?এই ভুলের পরিণতি কী জানি না।একটি মেয়ের ভালোবাসাকে নিয়ে তামাশা করছি না তো?

আমার চোখে আরও একটি মুখ ভেসে উঠেছে।

দীপা।

দীপাও একদিন এভাবে বলেছিল—তুমি আজ আসবে বলে খুব ভাবছিলাম।আমি জানি তুমি আমার পরীক্ষা কাল থেকে জানলে না এসে থাকতে পারবে না।‘

কিন্তু দীপাকে আমি কী দিতে পারলাম?কিছুই না।তার সরল ভালোবাসায়্ শুধু কিছু কলঙ্কের বোঝা চাপিয়ে দিলাম।

‘এত কী ভাবছ?’

হঠাৎ করবীর প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরে পেলাম।

‘না,না,কিছু নয়।’

আমার কথাটা আবশ্যকের চেয়ে হয়তো বেশি কেঁপে উঠেছিল।করবীও বুঝতে পেরেছিল তার থেকে আমি কিছু যেন গোপন করছি।

‘না,মিছে কথা,তুমি আমার থেকে কিছু একটা গোপন করছ।বল না,না বললে যে আমি ওটা নিয়েই ভাবতে থাকব,আর পড়া হবে না।’

আমি জানি,করবী আবশ্যকের চেয়ে বেশি সেন্টিমেন্টাল।আমি না বললে যা মেয়ে,হয়তো ভেক করে কেঁদে ফেলবে।হয়তো আগামীকাল পরীক্ষাও দেবে না।কিন্তু সত্যি কথা বলে দেবার পরে?ও যদি আমাকে ভুল বুঝে? করবী যদি আমাকে সন্দেহ করে?

করুক,করুক,এভাবে যদি করবী ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পায়,আমার মতো একটা জীবনের সঙ্গে করবীর জীবনকে জড়িয়ে ফেলার মধ্যে লাভ কোথায়?

‘তোমার শুনে ভালো লাগবে না করবী,বিশেষ করে আগামীকাল তোমার পরীক্ষা।’

‘তবু বল না...!!’

একটা মেয়ের কথা ভাবছি।’

‘মেয়ে?’

‘হ্যাঁ,মেয়ে।আগের দিন আমি যাব বলে সেও একদিন তোমার মতো অপেক্ষা করছিল,সেও একদিন...।’

আমি থেমে গেলাম।আমার কণ্ঠ শুকিয়ে গেছে বলে মনে হল।কী এক অশরীরী শক্তি যেন আমার বাকরোধ করে ফেলল।

‘বল,থেমে গেলে কেন?’

করবীর চোখে ঊৎকণ্ঠার অলস চাহনি। আমার দুচোখের দিকে নিবিড় ভাবে তাকিয়ে রয়েছে। আর আমার দুচোখে এখন কেবল বেঁচে আছে টি-বি রোগির বুক থেকে বেরিয়ে আসা কিছু রক্তরাঙা স্মৃতি।

অবশেষে আমি বললাম।আমি একে একে দীপার কথা বলে গেলাম।দীপা আমার কেউ নয়।আমার প্রেমিকাও নয়।প্রেম সম্পর্কে জ্ঞান হওয়ার আগেই দীপা নামের মেয়েটি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। দীপা হয়তো আমার চেয়ে দুই এক বছরের বড় ছিল।হয়তো আমরা সমবয়সী ছিলাম।বয়স সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান ছিল না। ও আমার চেয়ে এক ক্লাস ওপরে পড়ত,সেইজন্য আমার ওপরে সে কর্তৃত্ব ফলাত।আমিও সেই কর্তৃ্ত্ব বিনা প্রতিবাদে মেনে নিয়েছিলাম।

দীপাদের বাড়ির সঙ্গে কীভাবে আমার এত নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আজ আর আমার মনে নেই।নিজের অজান্তেই একদিন আমি পুরো বাড়িটার সঙ্গে আপন হয়ে পড়েছিলাম।সময় পার হয়ে যাচ্ছিল।বয়সের হিসেবে আমি ইতিমধ্যে অনেক বড় হয়ে গিয়েছিলাম।দীপা আমাকে বই এনে দেয়।দীপা আমার পরীক্ষার জন্য সুন্দর নোট লিখে দেয়।নিজের অজান্তেই দীপার মধ্যে আমি দিদির ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিলাম।

তখনই আমার জীবনে আর ও একটি ছেলে এল।দীপঙ্কর নামের এই ছেলেটি আমার চেয়ে কয়েক বছরের বড়।হঠাৎ কেন জানি এই ছেলেটির মধ্যে আমি খুঁজে পেলাম অনেক ভালোবাসা।দাদা–দিদি এদের স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত আমার মন এই দীপঙ্কর নামের ছেলেটির মধ্যে অনেক কিছু ভালো খুঁজে পেল।দীপঙ্কর তখনও পাশ করে আসেনি।অসমের বাইরে কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।হঠাৎ একদিন এই দীপঙ্কর দাদা আমার সামনে বলে ফেলল,’দীপাকে আমার ভালো লেগেছে,আমি যদি কখনও কোনো মেয়েকে বিয়ে করি তাহলে একেই করব।’

আমি বলেছিলাম—দীপাকে বলব?

দীপঙ্করদা বলল –‘দরকার নেই। এখনও অনেক সময় আছে।বিয়ে বহু দিন পরের কথা,আমি তো তোমাকে সমস্ত কিছুই বলেছি,লেট মি এনজয় ফার্স্ট।আমি কোথাও ফেলিওর হইনি,এখানেও হব না।’দীপঙ্করদা কী অর্থে কথাটা বলেছিলেন বুঝতে পারিনি।তবু আমার মনে সন্দেহের ছায়া ঘনিয়ে এল।দীপঙ্করদা তার জীবনের অনেক কথাই আমাকে বলেছে,কেরালার উমাদেবীর সঙ্গে বোটানিকেল গার্ডেনের লজ্জাজনক সেই কথাগুলি থেকে শুরু করে আরও অনেক গোপনীয় কথা। দীপঙ্করদা কীভাবে বলেছিল জানি না,কিন্তু শুনতে গিয়ে আমার কান লাল হয়ে গিয়েছিল।তখন আমি অনেক বড় হয়েছি,অনেক কিছু বুঝতে পারছি,ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র হিসেবে অনেক না জানা কথা জেনেছি।

কিন্তু একদিন যা ভাবিনি সেটাই হল।ছিঃ! দীপঙ্করদা কীভাবে এত নিচে নামতে পারলেন?একদিন হঠাৎ আমাকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবেজিজ্ঞেস করলেন—‘তোমার সঙ্গে দীপার প্রকৃ্ত সম্পর্ক কি?’মানে আমি কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম।

‘জীবনে মাত্র এই মেয়েটির কাছেই আমি পরাজিত হলাম’—দীপঙ্করদা কিছু কঠো্র হয়ে বলল—সেই মেয়েটি হল দীপা। আর এর পেছনে নিশ্চয় কেউ আছে,সে আর অন্য কেউ নয়,সে হলে তুমি।’

‘তুমি কী বলছ?আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললাম।

‘কিছুই নয়’,কিছুটা বিদ্রূপের হাসি হেসে বলল,’বলছি আমি আমার চেয়ে দুই এক বছর বা তার চেয়ে বেশি বড় মেয়েকে কোনোদিন দিদি বলে ভাবিনি,দিদি-বোন এসমস্তই ভুয়ো,সেরকম ভুয়ো আমি অনেক দেখেছিকিন্তু,কিন্তু তুমি আমার সমস্ত আশা আকাঙ্খায় ধ্বংস করে দেবে বলে কখনও ভাবিনি... তুমি...’

সেদিন দীপঙ্করদা অনেক কথা বলে গেল।কথা বলতে গিয়ে কেবলই উত্তেজিত হয়ে উঠতে লাগল।সেদিন আমি কেঁদেছিলাম। খুব কেঁদেছিলাম।কিন্তু আমি প্রতিবাদ করতে পারিনি।প্রতিবাদ করার সমস্ত শক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।আমি সেদিন মৃত্যু কামনা করেছিলাম,কিন্তু মৃত্যুকে আমি জড়িয়ে ধরতে পারলাম না।

এটা গরমের বন্ধের কথা।তারপর ধীরে ধীরে আমার টেস্ট এবং ফাইন্যাল পরীক্ষা এসে গেল।হাজার চেষ্টা করেও দীপঙ্করদার কথাগুলি আমি মন থেকে তাড়াতে পারলাম না।দীপঙ্করদাও সময় এবং সুবিধা বুঝে এই প্রতিবাদহীন অত্যাচার আমার ওপর চালিয়ে যেতে লাগল।

কিন্তু আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিলাম এটা দীপঙ্করদার সবসময় আমাকে হাতে রাখার কৌশল মাত্র। সে ভেবেছিল যেহেতু তার হাতে ব্রহ্মাস্ত্র রয়েছে তাই আমি তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনটার কথা কাউকে জানাতে সাহস করব না।কিন্তু সহ্য এবং ধৈর্যের ও একটা সীমা রয়েছে,আমার মন ঘৃণায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। অবশেষে ঠিক করলাম আর নয়,অসহ্য।

বাড়িতে একদিন সবকথা খুলে বললাম।দীপাকেও বললাম।তবু তার মধ্যেও অনেক কথা বাকি থেকে গেল,যা আমি বলতে পারলাম না,কেন জানি মানুষটাকেআরও খারাপভাবে দেখাতে ইচ্ছা করল না।

আমার সঙ্গে দীপঙ্করদার সমস্ত সম্পর্ক শেষ হয়ে এল।আমি আজ দীপার কথা জানিনা।আমি আজ দীপঙ্কর নামে কালপুরুষটার কথা কিছুই জানি না।দীপাকে ভোলার জন্যই এত দূরে সরে এলাম,কিন্তু ভুলতে পেরেছি কি? সারাটা জীবন আমার দিনদিন অসহ্য হয়ে উঠেছে ।

আমি থেমে গেলাম।করবীর চোখে সেই অপরূপ চাহনি।কথা বলতে বলতে আমার দুচোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে এসেছিল।

ছিঃ কাঁদছ কেন? করবীর প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার কাছে নেই।করবী আমার মাথাটা তার বুকের কাছে টেনে নিয়েছিল।একটা ছোট ছেলেকে আদর করার মতো সে শুকিয়ে যেতে থাকা আমার চোখের জল মুছে দিয়েছিল

‘আমার দিকে তাকাও।‘

করবীর কথামতো আমি মাথাটা ঘুরিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম।

‘আমার মধ্যে তুমি কি দীপাকে ফিরে পেতে পার না?’

আমি করবীর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম না। করবীর কাছ থেকে আমি হোস্টেলে ফিরে এসেছিলাম।আমার সামনে কেবল তিনটা ছবি।দীপা,দীপঙ্কর এবং করবী।দীপাকে কি করবীর মধ্যে খুঁজে পাব? ও হো অসম্ভব।দীপা আর করবী।দুটো আলাদা কক্ষপথের দুটো আলাদা জিনিস।

দীপা আমাকে ভালোবেসেছিল,সত্যি কথা।দীপা আমাকে স্নেহ করত সত্যি কথা।দীপা আমার জন্য করবীর মতো অপেক্ষা করেছিল এটাও সত্যি কথা।

কিন্তু দীপা সম্পূর্ণ আলাদা।দীপা এবং করবীর ভালোবাসার মধ্যে অনেক পার্থক্য।দীপা আমাকে অভিভাবকের দাবিতে ভালোবেসেছিল। দীপা আমাকে একজন স্নেহময়ী দিদির মতো স্নেহ করত।

কিন্তু করবী?

না,না করবীর মধ্যে আমি দীপাকে খোঁজ করে দীপার স্নেহকে প্রতারিত করতে পারি না,দীপার ভালোবাসার সঙ্গে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না।

আর দীপঙ্কর?

কিছুই হবে না,কক্ষপথ থেকে খসে পড়া কেবল একটি উল্কাপিণ্ড,আমার জীবনের এক কালপুরুষ।