শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

কটন কলেজ, পর্ব -৫

।পাঁচ।।

আজ কটন কলেজে ইউনিয়নের ইলেকশন। ভোট দিতে যাওয়া ছাড়া সারাটা দিন হোস্টেলে বসে রয়েছি।একজন ও রুমমেট নেই। আজকের মতো একটা সুন্দর দিন কেউ বৃথায় যেতে দিতে চায় না। আজ প্রায় এক মাস ধরে ছেলে-মেয়ে দেখলেই ভয় পাচ্ছি। তার মধ্যে হোস্টেলে থাকা ছেলের ক্ষেত্রে আরও বেশি অসুবিধা। সকালে ঘুম থেকে উঠার আগেই ক্যানভাসিঙের জন্য ছেলে এসে যায়।

ছেলে এলে আপত্তি নেই,কিন্তু মেয়েরা এলে সারাটা দিন ভোটের কাজে উৎপাতের মধ্যে একটা ‘অ্যামিউজমেন্ট’ হয় যদিও কিছু সমস্যা বেড়ে যায়। গার্লস হোস্টেলের মেয়েদের রুমে ছেলে প্রবেশ করার অধিকার নেই,কিন্তু ছেলেদের হোস্টেলে মেয়েরা নির্বিঘ্নে আসতে পারে। তাই ঘুম থেকে উঠেই রুমটাকে ঠিক-ঠাক করায় লেগে পড়ি।আমার কাছে সেরকম কোনো খবর থাকে না যদিও রমেন এই সব ব্যাপারে বড় পার্টিকুলার।

গতকাল আমাদের হোস্টেলে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল। কথাটা মনে পড়তেই পুনরায় হাসি পেয়ে গেল। দেরি করে এলে দেখা হবে না ভেবে উত্তরা বরুয়াদের পার্টিটা নয়টার সময়েই এসে পড়ল। আমার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক নেই যদিও একেই ক্লাসের বলে প্রথমেই আমাদের রুমে এল। বাধ্য হয়ে উত্তরাদের নিয়ে রুমে রুমে যেতে হল।অবশ্য রুমমেট হিসেবে রমেনই এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করল।

অনেক ছেলে ঘুম থেকে উঠেই নি।জানে সকালে উঠে লাভ নেই,এই কয়দিন কারও পড়াশোনা হয় না। ভোট,ভোট আর ভোট। না কারুর জন্য বলতে হবে,নয়তো কারও জন্য শুনতে হবে। রুমে রুমে কার্ড আর কার্ড,বিভিন্ন রঙের আর বিভিন্ন কথা।রমেন গতকাল একটা বড় কাগজ আমাদের রুমের সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে—

‘তুমি কেবল ভোট চাও

আমি কেবল দিয়ে যাই

তার মধ্যে থাকে যেন

‘ডিলাইট’নিয়ে সময়।‘

আমি খুলে দিতে চেয়েছিলাম,সে দিল না। কবি বসবাস করা রুম,মানে আমি থাকা,তাই সবাইকে কাব্যিক হতে হবে। এটাই তার যুক্তি।

আমরা গিয়ে বলিনদের রুমে ঢুকলাম।বলিন উঠেই নি। মাথায় কাপড় মুড়ে শুয়ে আছে। আমি ‘উঠ উঠ’বলে তার পুরো শরীর মুড়ে থাকা কাপড়টা টান মেরে খুলে দিলাম।তবে রমেনের প্রেজেন্স অফ মাইণ্ড সত্যি প্রশংসনীয়।চোখের পলক ফেলার আগেই বেড কভারটা টান মেরে নিয়ে তাকে ঢেকে দিল।

লজ্জায় আমি রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তরার চোখে চোখ পড়ায় আমার লজ্জা আরও বেড়ে গেল। বাকি রুমগুলিতে রমেনই ঘুরিয়ে দিল। যাবার সময় কেবল উত্তরা আমাকে বলে গেল।উত্তরারা যাবার পরে আমি রমেনকে বলেছিলাম ,--‘বলিনের কি কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। এই সকাল সাতটা পর্যন্ত কেউ এভাবে শুয়ে থাকে,আমার খুব লজ্জা করছিল।‘

‘তোর চোখ আছে বলে লজ্জা পেয়েছিস।আমি অবশ্য সে চোখ মেলার আগেই কাপড়টা দিয়ে তার শরীরটা ঢেকে দিয়েছিলাম।‘

‘তবু

‘দেয়ার ইজ ওনলি ওয়ান ট্রুথ ইন দি ডার্কনেস’—সে হো হো করে হেসে উঠল।আমি আর তার সঙ্গে কথা বাড়াতে ইচ্ছা করলাম না।

একা একা বিরক্ত বোধ করতে লাগলাম।কাপড়-চোপড় পরে বেরিয়ে গেলাম।জানি এখন আর ভোটের উপদ্রব নেই। সবারই একটা মাত্র উৎকণ্ঠা,কে জিতেছে।ইউনিয়ন হলে তীব্র গতিতে কাউন্টিং চলছে।

এই কয়েকটা দিন ভোটের উপদ্রব আমাদের ওপর বেশ ভালোভাবেই চলল।তার কারণ অবশ্য রুমমেটরা। ওরা খুব সাবধানে প্রচার করে দিয়েছে যে গার্লস হোস্টেল গুলিতে আমার প্রতিপত্তি খুব বেশি।ওরা এটাও বলেছিল যে কয়েকটি ইনফ্লুয়েন্সিয়েল মেয়ে আমাকে জেনারেল সেক্রেটারির জন্য কন্টেস্ট করতে বলেছিল।

এর অবশ্য একটা অর্থ ও রয়েছে। জেনারেল সেক্রেটারির জন্য প্রথমে দুজন কনটেস্ট করার কথা ছিল।তার মধ্যে জ্যোতির্ময়কে সমস্ত মেয়েরা ভোট দেবে বলে এক রকম ঠিক করে রেখেছিল।কিন্তু ফ্রেসমেন সোসিয়েলের দিন বক্তৃতা দেবার সময় অপ্রিয় সত্য কথা বলার জন্য সমস্ত মেয়েরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসল।জ্যোতির্ময়ের সঙ্গে দীপক কনটেস্ট করছিল।দীপক ছেলেটি সবদিক থেকে ভালো ছিল। কটন কলেজের মতো একটা কলেজের প্রতিনিধিত্ব করার তার ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু নাই মাত্র একটা জিনিস,সেটা হল চেহারা।প্রয়োজনের চেয়ে পেট আর মাথাটা বড়,চুলগুলি বিশৃঙ্খ্ল,গায়ের রঙটি রাতের বেলা হলে অন্ধকারের সঙ্গে মিলে থাকে।এরকম একটি ছেলে এফিসিয়েন্ট হলেও মেয়েরা প্রতিনিধি করে পাঠাতে পারে না।নেহেরুর মতো ব্যক্তিও যখন রাষ্ট্রদূতের চেয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করায় রাষ্ট্রদূতের পত্নীর ওপরে গুরুত্ব আরোপ করে গেছেন,সেরকম ক্ষেত্রে কটন কলেজের মেয়েদের আর দোষ কি? হাজার না হোক,ড্রেইন পাইপ বলে ঠাট্ট করলেও ড্রেইন পাইপের প্রতি মেয়েদের আকর্ষণই বেশি।

আজ প্রায় পনেরো দিন আগের কথা। সকাল ছয়টায় গিয়ে এন-সি-সির প্যারেড গ্রাউণ্ডে পৌছে গেলাম।আজকাল এন সি সি কম্পালসরি।প্যারেডে আসাই শক্ত,তাতে আবার সেদিন প্রফেসর বরুয়া নিজে প্রত্যেক ক্যাডেটের ড্রেস চেক করতে শুরু ক্রেছেন।প্রত্যেকের কিছু না দোষ ধরা পড়েছে। স্ট্যাণ্ডার্ড সাইজ,তাই পেন্টগুলি ভালোভাবে ফিট না হলে দরজির কাছে দিয়ে ঠিক করে নেবার নির্দেশ দেওয়া আছে। রমেন সুবিধা পেয়ে বোটমটা চৌদ্দ করে নিল।প্রফেসর দেখে গরম।এন সি সির নিয়মানুসারে বোটম সবসময় সতেরো থেকে উনিশের ভেতর হতে হবে।রমেন নির্বিকার,মুখে কিছু না বলে আমাদের থেকে কিছুটা দূরে মাঠের এক পাশে প্যারেড করতে থাকা গার্লস কোম্পানিটার সার্জেন্টের দিকে আঙ্গুলের নির্দেশ করলেন।সার্জেন্ট হওয়ার জন্য সম্ভব তাই নিজেই একটা পেন্ট তৈ্রি করে নিয়েছিল। ঘন খাকি কাপড় না হয়ে পাতলা কিছু হলে পরেছে কিনা এত দূর থেকে বোঝাই যাচ্ছে না। পেন্টটা সে কীভাবে পরে বা খোলে সে-ই জানে।আমি কিছুটা ভেবেও বুঝতে পারলাম না যদিও আর্ট ফর দি সোসাইটি চেক বলে আমার পেণ্টের বোটাম শোলো-সতেরোতে নামিয়ে আনল।

আমরা প্রত্যেকেই জোরে হেসে উঠেছিলাম।প্যারেড গ্রাউণ্ডে এইসব কৌতুক নিষিদ্ধ যদিও ক্রোধী বরুয়া কিছুই বলতে না পেরে সরে গিয়েছিল।মেয়েটিকে পেন্টটার বিষয়ে কিছুই বলতে দেখলাম না,অবশ্য পরের দিন থেকে মেয়েদের প্যারেড জাজ ফিল্ড থেকে সরিয়ে নিয়ে ইউনিয়ন হলের সামনে করা হল। এত বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে বলে সেদিন আমরা ভাবতেই পারিনি।রমেন ও বলেছিল,এর চেয়ে চুপ করে থেকে গালি খাওয়াই ভালো ছিল।

মেয়েদের কিছু বলা যাবে না,অবাধ স্বাধীনতা। আমাদের যিনি শেখান সেই পাঞ্জাবি ইনস্ট্রাকটার ও একদিন বলেছিলেনঃ ছেলেরা না পারলে গায়ে হাত দিয়ে শেখানো যায়,কিন্তু মেয়েরা বারবার ভুল করলেও গায়ে হাত দেওয়া তো বাদেই,তিন ফুটে্র বেশি কাছে গেলেই চাকরি যাবে।সেরকম ক্ষেত্রে এন সি সি পেন্টের বোটাম নিয়ে কে কথা বলতে যাবে?

তাই মেয়েরা যে দীপককে ভোট দেবে সেটা আশা করা বৃথা। মেয়েদের বক্মটাই কটন কলেজ ইউনিয়নের ইলেকশনে ডিসাইডিং বক্ম। তাই মেয়েদের ভোটের আশায় এক দুজন করে কয়েকজন জেনারেল সেক্রেটারির জন্য কনটেস্ট করেছে।

এরকম একটি সুযোগ রুমমেটরা সুন্দরভাবে গ্রহণ করল।তার মধ্যে আমার সম্পর্কিত মেয়ে দুটো হোস্টেলে আছে। সেকথা সুন্দরভাবে ওরা প্রচার করে দিয়েছে। ফলে রাত নয়টার পরে বিশেষ ইন্টারভিউয়ের জন্য অন্যদের অজান্তে আসা পার্টির উৎপাতে রাতে ঘুমোতে এগারোটা বারোটা বেজে যায়।

সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছি যদিও বোঝে না।সবাই ভাবে দাম বাড়াচ্ছি।সম্পর্কীয় ভাই বোনের কথা বাদেই,নিজের বোন হলেও আমার কথানুসারে যে ভোট দেবে না সে তো জানা কথা। মেয়েদের কাছ থেকে ভোট আদায় করার কিছু টেকনিক আছে।সেটা যে ঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারবে,সেই মেয়েদের ভোট পাবে।আমি কারও কথা বলছি না,জানি বলে লাভ নেই।মাত্র কুন্তলাকে বলে রেখেছি আমার কথা বলে যদি কোনো ক্যাণ্ডিডেট ভোটের কথা বলে তাহলে আমি বলেছি বলে দেবার জন্য।

কিন্তু বাকি রুমমেটরা এই কথা নিয়ে আজ পনেরোদিন পয়সা খরচ করেনি।রমেন তো আমাকে নিয়ে ছাত্রীবাড়ি যাওয়ার রিক্মা ভাড়াটা পর্যন্ত অনেকের কাছ থেকে মিথ্যা কথা বলে আদায় করেছে।আমি কোনো আপত্তি করিনি,কিন্তু তার ভাগও রুমমেটদের কাছে চাইনি।যা খুশি করে থাকতে দিয়েছি।

আমরা এসে ইউনিয়ন হলের কাছে পৌছে গেলাম।এদিক থেকে বিশ্বজিৎ মেধিকে আসতে দেখলাম।মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি,নামটা বিশ্বজিৎ হলেও বিশ্বকে জয় করতে পারেনি।তবু জিজ্ঞেস করলাম –‘কি মেধি খবর কি?’

‘এভাবে বিট্রে করবে ভাবিনি।‘—রাগ আর দুঃখের সঙ্গে বলল।‘কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।।‘

‘দুঃখ করবে না মেধি,ইলেকশনে হারজিৎ আছেই।উপযুক্ততা দেখে তো আর কেউ ভোট দেয় না,নাহলে কি আর হারতে হয়?

তিনশো টাকার মতো খরচ হয়ে গেল। দুই মাস মেসের ডিউজ দিতে পারিনি,তারমধ্যে স্কলারশিপ কাটা গেছে,হোস্টেলে সুপারের দয়ায় থাকতে পারছি। ‘

‘এসব বাদ দিন,আমি কিছুটা সান্ত্বনা দিয়ে বললাম—রাজনীতিতে নামলে এসব থাকবেই,উপযুক্ত মেধাবী ছাত্র দেখলে সরকার ও চাপ সৃষ্টিকরে।জানেনই তো সরকার কাউকে ভয় করে না,করে কেবল স্টুডেন্টকে।‘

সরকার এবং ভোট যারা দেয়নি তাদের গালিগালাজ করতে করতে বিশ্বজিৎ মেধির সঙ্গে হোস্টেলে ফিরে এলাম।বিশ্বজিৎ হেরে যাওয়ায় সত্যি খারাপ লাগল।উপযুক্তের পরাজয় হল বলে নয়,সাধারণ কিছু কৌ্তুক থেকে শেষ পর্যন্ত ছেলেটির এইরকম অবস্থা হওয়ার জন্যই খারাপ লাগল।

আজ প্রায় এক মাস আগের ঘটনা। রমেন,আমি এবং কয়েকটি ছেলে কলেজ থেকে হোস্টেলের দিকে যাচ্ছিলাম।রাস্তায় বিশ্বজিৎ মেধির সঙ্গে দেখা হল। আমাকে দেখে খুব ব্যস্তভাবে আমার পাশে এসে বলল –‘আমি আপনার খোঁজে হোস্টেলে গিয়েছিলাম।‘

‘কেন?’

‘কথাটা হয়তো শুনেছেন যে আমি কটনিয়ান এর এডিটরের জন্য কনটেস্ট করছি।কিন্তু কিছু কিছু ছাত্র ছাত্রী আপনি কনটেস্ট করবেন বলায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।শেষ পর্যন্ত আপনি কনটেস্ট করছেন না জানতে পেরে আপনাদের ভরসায় সাহস করে দাঁড়িয়েছি।‘

আমি জানি,আমি দাঁড়াব বলে তিনি কোথাও শুনেন নি নতুবা এখনও যদি আমি দাঁড়াব বলে শুনেন তাহলে তিনি সরে দাঁড়াবেন না। কটন কলেজে ইলেকশন খেলার সাহস এবং সামর্থ্য আমার নেই,ইলেকশনের নামে তিন-চারশো টাকা খরচ করব কোথা থেকে। তবু বললাম—‘আমার দাঁড়ানো না দাঁড়ানো নিয়ে আপনার কী আসে যায়,যাকে উপযুক্ত ভাববে তাকেই ভোট দেবে,তাই নয়কি?’

‘না না আপনারা কবি সাহিত্যিক মানুষ,আপনাকে ভোট না দিয়ে কি আর আমাকে দেবে? সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও আপনাদের মতো অবদান নেই। ‘

‘ভুল মেধি ভুল,কবিতা লেখা আর ইলেকশন খেলে এডিটর হওয়া দুটো আলাদা জিনিস।‘

আমাদের দুজনের কথা রমেন শুনছিল। চট করে দুজনের কথার মাঝখানে সে জবাব দিল---‘তুই একটা মূর্খ মেধি।‘

‘কী হল? অবাক হয়ে মেধি রমেনের দিকে তাকাল।

‘মূর্খ নয়তো কি,এডিটরের জন্য দাঁড়ানো বা জেনারেল সেক্রেটারির জন্য দাঁড়ানো দুটাই ইলেকশন,তাই দুটিই পলিটিক্স।ইলেকশন আর পলিটিক্স হল টাকার এপিঠ আর ওপিঠ—আমাদের মতো ডেমোক্রেটিক দেশে। তাই তোর কি দেখবে?পলিটিকেল কন্ট্রিবিউশন। আর ও হল কবি,গল্প টল্প লিখতে পারলেও না হয় কথা ছিল। ওর কবিতা কজনই বা পড়ে আর কজনই বা ওকে চিনে?’

আমি ইচ্ছা করেই রমেনের কথায় বেশি করে সায় দিলাম।রমেন ও রেলগাড়ির মতো চালিয়ে গেল—‘তোকে একটা ভালো বুদ্ধি দিচ্ছি শোন।খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার জন্য অপোজিশন পার্টিগুলি আগামী সোমবার হরতাল পালন করবে,তুই সেদিন পিকেটিং কর।কোনো রাজনৈ্তিক আন্দোলনই স্টুডেন্টস ছাড়া সফল হতে পারে না ,এতে যদি অ্যারেস্ট হস ভালোই হবে,না হলেও দেখবি তোর নাম কলেজের প্রত্যেকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে,তাছাড়া এই ভয়াতুর ইউনিয়ন বডির লোকগুলিও কোথাও অ্যারেস্ট হয় বলে ছাত্ররা সক্রিয় অংশগ্রহণ করে না বলে বলে বেড়াচ্ছে।‘

সেদিন আমাদের কথা ওখানেই শেষ করে আমরা হোস্টেলে ফিরে এসেছিলাম।তারপর সেকথা ভুলেই গেছি।কিন্তু সত্যি সত্যিই হরতালের দিন মেধি কোথাও পিকেটিঙ করেছিল,ডি আই রুলে ওকে অ্যারেস্ট করা হল। অবশ্য কটন কলেজের ছাত্র বলে বেশি সময় তাকে আটকে রাখল না।ছোটখাট ব্যাপারে স্টুডেন্ট নেমে পড়লে কন্ট্রোল করা মুশকিল হবে বলে সরকারও জানে। অবশ্য তার নামে একটা রিপোর্ট শিক্ষা বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হল। ফলে প্রিন্সিপাল কলেজের নিয়ম শৃঙ্খ্লা ভঙ্গের নামে ওপর মহল থেকে রিপোর্ট আসায় তার স্কলারশিপটা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ কখনও করবে না বলে লিখে দেওয়ায় এবং হোস্টেল সুপারিনটেণ্ডের চেষ্টায় সে হোস্টেলে থেকে যেতে পারল।

কিন্তু তার আজকের অবস্থার জন্য সত্যিই খারাপ লাগল।সাধারণ কটনিয়ানের সম্পাদকের পদটার জন্য হেরে যাওয়ার পেছেন আমরা হয়তো কিছুটা দায়ী,কে জানে। একটা নিরীহ ছেলের এরকম অবস্থা হলে কার না খারাপ লাগবে।আমি তো তার বাড়ির অবস্থার কথা জানি না,যদি আমার মতোই হয়ে থাকে।

এই সমস্ত কথা ভেবে ভেবে আমরা এসে হোস্টেলে পৌছলাম।পড়াশোনা করার পরিবেশ আজ নেই।তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে শুয়ে পড়লাম।