বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

উপসাগরীয় সঙ্কটে পাকিস্তানের সহযোগিতা চায় ইরান

পারস্য উপসাগরে পরিস্থিতির অবনতির সাথে সাথে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বিভিন্ন দেশ সফর করছেন এবং ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যকার অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সাথে জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশান (জেসিপিওএ) পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং এর কারণে ইরানের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের ধারাবাহিক অবনতি হচ্ছে।

ইরানের দিক থেকে অনির্দিষ্ট হুমকির কথা বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র্র ওই অঞ্চলে একটি বিমানবাহী রণতরী এবং বি-৫২ বোমারু পাঠানোর পর দুই দেশের অচলাবস্থা কাটানোটা আরো কঠিন হয়ে গেছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে যে তারা মধ্যপ্রাচ্যে আরো সেনা পাঠাবে এবং ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করবে। ভারত, চীন, জাপান ও তুর্কমেনিস্তান সফরের পর জারিফ চলতি সপ্তাহে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সেনা নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের জন্য ইসলামাবাদ পৌঁছান। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে বিপজ্জনক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং সে কারণেই আলোচনার জন্য আমি পাকিস্তানে এসেছি’।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশির সাথে আলাদা বৈঠক করেছেন জারিফ। যদিও এই সব বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু জানানো হয়নি, তবে এটা স্পষ্ট যে পরিস্থিতির অবনতি ঠেকানোর জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে ইরান।

অর্গানাইজেশান অব ইসলামিক কো-অপারেশান বা ওআইসি ও আরব লিগ দুটোরই সম্মেলন হতে যাচ্ছে শিগগিরই, যেখানে সৌদি আরব চাপ দেবে ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়তো চাইবেন ইসলামাবাদ যেন রিয়াদকে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া থেকে ফেরায়। মনে হচ্ছে ইরান কোনো সঙ্ঘাতের ব্যাপারে আগ্রহী নয় এবং সৌদি আরবের সাথে ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের দীর্ঘ মিত্রতার কারণে তারা উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখতে পারবে।

এই মুহূর্তের লক্ষ্য হওয়া উচিত উত্তেজনা কমানো। এরপরও চেষ্টা থাকা উচিত সংলাপ ও নতুন পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের। জিসিপিওএ নিয়ে নতুন করে আলোচনা করাটা হবে এ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার সবচেয়ে ভালো উপায়। ওমান এ যাবৎকালে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে এসেছে কিন্তু সম্প্রতি আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ওয়াশিংটনকে সাহায্য করছে পাকিস্তান এবং তারা ইরানের ব্যাপারেও কার্যকর মধ্যস্থতাকারী হতে পারে।

সম্প্রতি পরিস্থিতির অবনতির পর ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা নাকচ করে দিলে পরিস্থিতি একটা জটিল অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। জারিফকে পাকিস্তানের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে কোরেশি বলেছেন, তার দেশ ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সব বিবদমান ইস্যুর সমাধান চায়’। কারণ আঞ্চলিক উত্তেজনা কারোরই কাম্য নয়। তবে, জারিফের আগমনের ঠিক আগেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের বিবাদে পাকিস্তান কোনো পক্ষ নেবে না। সে অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে পাকিস্তান সব পক্ষের প্রতি ‘সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে এবং সতর্ক করে দিয়েছে যে, যেকোনো ভুল পদক্ষেপ বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে’।

সূত্র : আলমনিটর