লেখক পরিচিতি – ১৯৬২ সনে শিবসাগরের গড়গাঁওয়ে বন্তি শেনচোয়ার জন্ম হয়। শিলঙের উত্তর পূর্ব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী।বর্তমানে গুয়াহাটির রাধা গোবিন্দ কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা। প্রকৃতিপ্রমিক এই লেখিকার প্রকাশিত গল্প গ্রন্থ যথাক্রমে ‘নিষাদ গান্ধার’,’সরলা আরু সুন্দর’,’দুপুরের পার চরাই’এবং ‘মৌ-সরা’। সম্প্রতি প্রকাশিত উপন্যাস ‘আকনবিন্ধীর সোণপরুয়া’। উপন্যাসটির পটভূমি শিলঙের উত্তর পূর্ব বিশ্ববিদ্যালয়। উপন্যাসটিতে নেহুর প্টভুমিকায় সমগ্র উত্তরপূর্বের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চিত্র ফুটে উঠেছে ।
#
জান কি আজ নাকি নন্দিনীর চোখ নাচছে। ডান চোখ না বাম চোখ? কোনো কথা নেই,যে চোখই নাচুক না কেন –ভাস্কর আসবেই। এটা চোখ নয়,ডঃফিলিপ্সের বায়োলজিকেল ক্লক।
কাঁটার মতো লাগছে।কোনো একটি জানালা দিয়ে ওয়ার্ডেনের নির্লজ্জ স্বামীটা নিশ্চয় আমাদের উঁকি দিয়ে দেখছে মনে হয়। তাই না?
তৎক্ষণাৎ প্রত্যেকেই ওয়ার্ডেনের ঘরের জানালার দিকে তাকাল।হ্যাঁ,বায়োলজিকেল ক্লক ঠিকই বুঝতে পেরেছে।মিঃঝুনঝুন ওয়ালা পর্দা ফেলে ভেতরে ঢুকে গেছেন।
মোটের ওপর বায়োলজিকেল ক্লক এখন বিজনী হোস্টেলের নতুন রেট্যারিক।কার ও জ্বর। ও বুঝতে পেরেছি। ওর বায়োলজিকেল ক্লকের ব্যাটারি ডাউন। বদলাতে হবে।
বিজনির এই নতুন শব্দ অলঙ্কার ময়ূরভঞ্জকেও প্রভাবিত করেছে।ময়ূরভঞ্জ কমপ্লেক্সের সুদৃশ্য সামার হাউস গুলিতে অনবরত বসে থাকা ছেলেরা কি ভেবেছে যে তারা এভাবে বসে বসেই মেয়েদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে?অন্য কোনো কাজ কর্ম না করলেও চলবে? বায়োলজিকেল ক্লক নিশ্চয় নির্দেশ দিয়েছে সঙ্গীর জন্য প্রতীক্ষা করার জন্য।
বায়োফিজিক্সের অন্য একজন গবেষক শ্রীনিবাসের গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়ে এক তরফাভাবে হাবুডুবু খাচ্ছে রাজনীতি বিভাগের ছাত্রী শ্রেয়া। শ্রেয়া বিজনী হোস্টেলে থাকে। শ্রীনিবাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অবশেষে শ্রেয়া মূর্ছা যাবার ভান করে বলে বোর্ডাররা একমত। কারণ আছে।শ্রেয়া মূর্ছা যায়।ওয়ার্ডেন ডঃঝুনঝাপ্পা ডঃশর্মাকে ডেকে পাঠান।ডঃশর্মা শ্রীনিবাসের সঙ্গে একই ভাড়াবাড়িতে থাকেন।সম্বিৎ ফিরে পেয়ে নাকি শ্রেয়াই ডঃশর্মাকে শ্রীনিবাসের কথা জিজ্ঞেস করে।
বিভাগের অন্য এক অধ্যাপক ডঃপণ্ডিতার কথাটা আলাদা। তাঁর জন্যই দেবাহুতিরা হিন্দি গান গাইতে অনুপ্রেরণা লাভ করে। দীর্ঘদেহী সুদর্শন মানুষটা। ক্লাসরুমে একেবারে বাঘ।বাইরে কিন্তু একজন কোমল মানুষ।পদমর্যাদাকে সরিয়ে রেখে অনায়াসে সদ্য স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভরতি হওয়া অন্য বিভাগের ছাত্রীদের চঞ্চল রসিকতার পাত্র হতে পারার মতো করে গ্রীবা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নীল চোখ মেলে স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকে। জলবায়ুর প্রভাব নাকি ?
হেলানো রাস্তাটা দিয়ে নেমে আসা সুদর্শন পণ্ডিতার দিকে দেবাহুতি গান গেয়ে গেয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। পণ্ডিতা হেলানো রাস্তা দিয়ে নেমে যাবার পরে আর তাকে দেখা গেল না। দেবাহুতি শেষবারের মতো মজার ছলে গাইতে থাকা গানটাতে নিজেকে ওজার করে দিল-
-মুড় মুড় কে মুঝে না দেখ মেরী পণ্ডিতা
দেবাহুতি মাঝখানে জিভ কামড়ে গান বন্ধ করে গম্ভীর হয়ে পড়ল। পণ্ডিতা নেমে যাওয়া রাস্তাটা দিয়ে ধীরে ধীরে কলাপী উঠে আসছে। সঙ্গে এক যুবক। পরিচিত বলে মনে হচ্ছে না?
কলাপীর চোখের আড়াল হওয়ার জন্য দেবাহুতি নীল ‘ফরগেট মী নট’ ঝোপটার আড়ালে গেল।অঙ্কশাস্ত্রের গবেষিকা কলাপীর হোস্টেলে অখণ্ড প্রতাপ। মেয়েদের তরল ব্যবহারে প্রকাশ্যে বিরক্ত কলাপী। দেবাহুতিরা পারতপক্ষে কলাপীর চোখে না পরে থাকতে পারলে খুশি হয়। ঠিক তো নেই,কোথায় কীভাবে দোষ দেখতে পায়। কলাপী নামেই কলাপী। পেখমের কোনো রেশই নেই তাঁর ব্যক্তিত্বে। এই মহিলার নামকরণ সম্ভব হলে অঙ্কশাস্ত্র থেকে হলে ভালো হত।
কিন্তু কলাপী আজ এ কোন যুবকের সঙ্গে? কলাপীর পতিদেব মলয়কে দেবাহুতি দেখেছে। এই যুবকটি মলয় নয়। কোথাও দেখেছে বলে মনে হলেও কিছুতেই মনে করতে পারছে না।
পাহাড়িয়া শহরটির বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সমতলের সীমন্তিনী নারী উদার জলবায়ুতে মুক্তভাবে চলাফেরা করা হোস্টেলের সমবয়সী মেয়েদের রসাল এবং গোপন আলোচনার বিষয়।
কিন্তু কলাপী আর অভিসার? যুবকের সঙ্গে কলাপীকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য দেবাহুতির সুগঠিত ভ্রূজোড়া কুঁচকে গেল। ফরগেট মী নট ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসার সময় সেই ভাবনা সে সেখানটাতেই বিসর্জন দিয়ে এল। কী দরকার!কে কার সঙ্গে কীভাবে বিকেল কাটায় কাটাক না। ফুলের রূপে সন্তুষ্ট থাকা ভালো।গন্ধের সন্ধানে নেমে অসন্তুষ্টি নাইবা কুড়োল।
ডানহাতে-বাঁ হাতে অলৌগুটি তলৌ খেলে দিদি রনী ওদের দিকেই দৌড়ে আসছে। রাঁধুনি কঙ নিশ্চয় তিনজনের জন্য মাকৈ পোড়া দিয়ে পাঠিয়েছে। দেবাহুতির জিভে জল এসে গেল।
দিদি রণীকে দশবারের মতো ধন্যবাদ জানিয়ে ওরা মহা আনন্দের সঙ্গে মাকৈর ওপরে আক্রমণ চালাতে উদ্যত হল।
ঠিক তখনই আগু পিছু করে দুটো ক্যাব বিজনীর সীমানায় চলে এল।সেমিস্টারের ক্লাস ছুটি হল। নিশ্চয় ময়ূরভঞ্জ থেকে বোর্ডাররা ফিরে এসেছে।
-দেখবি তুই কারা কারা এসেছে?
-আঙ্গীরা,প্রমিজ,বনশ্রী,শ্রীলক্ষ্মী এবং হোয়াট অ্যা প্লেজান্ট সারপ্রাইজ...
ওয়াই ডব্লিউ চি এর নাওমি বুয়ান এবং গারিখানার কাকলি চেতিয়াও এসেছেন।মীমদের মতোই সমান উৎসাহে ওরাও ক্যাবের ভেতর থেকে চিৎকার করতে লাগল।
নাওমি বুয়ান হলেন হাজারো সমাজসেবার কাজে উৎসর্গিত প্রাণ। বনশ্রীর সহপাঠী। ক্লাস করায় মোটেই উৎসাহ নেই,সময় ও নেই।পরীক্ষার আগে আগে কেবল বনশ্রীর পাশে দুদিন বসে। মীম,ক্রীণ এবং দেবাহুতির সঙ্গেও সেইসূত্রে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে। আজ শনিবার।নিশ্চয় সোমবার অ্যাসাইনমেন্টের কিছু কাজ আছে। আজ বনশ্রীর সঙ্গে বসে কাজ করে আগামীকাল পর্যন্ত সানডে স্পিরিটের জন্য খোলা থাকবে। আর সেইজন্যই আজ নাওমি বুয়ান রিজনিতে নিশ্চয়।
কাকলি চেতিয়া কত দিন পরে?
কাকলি চেতিয়া শৈশব থেকেই মীমদের সঙ্গে কোহিমাতে বড় হয়ে এসেছে।একই স্কুল, এক সঙ্গে খেলাধুলো। কলেজও এক সঙ্গে। নেহুতে এসেই তিনজনের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে গেল। আলাদা হোস্টেল। আলাদা বিভাগ।
ক্যাব থেকে নেমে প্রত্যেকেই দেবাহুতিরা খেতে থাকা মাকৈর পোড়া ভাগ চেয়ে বিপুল হর্ষোল্লাস শুরু করে দিল।
হাতে মাকৈ নিয়ে মীম উঠে দাঁড়াল। সে দুটো হাত কাকলির দিকে মেলে ধরল। ক্রীন লাফিয়ে উঠল।
কাকলি তাদের উদ্দেশ্যে দৌড়ে এল।
মুহূর্তের মধ্যে নির্জন অরণ্য ওরা মুখরিত করে তুলল —
Country roads, take me home
To the place I belong
West Virginia , Mountain Mamma
Take me home ,country roads
Almost heaven,West Virginia
Blue Ridge mountains,Shenandoah River
Life is old there,older than the trees
Younger than the mountain ,blowing like a breeze
All my memories ,gathered round her
Miner’s lady ,stranger to blue water
Dark and Dusty ,painted on the sky
Misty taste of moonshine ,teardrop in my eye
I hear her voice ,in the morning hour she calls me
The radio reminds me of my home far away
And driven down the road I get the feeling
That I should have been home,yesterday,
yesterday ...
চলবে ...।
অনুবাদক পরিচিতি -১৯৫৮ সনে অসমের নগাঁও জেলার যমুনামুখে বাসুদেব দাসের জন্ম হয়।শৈশব কেটেছে গুয়াহাটি শহরে। ১৯৮২ সনে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও ভাষা তত্ত্বে এম এ করেন। আজ পর্যন্ত অসমিয়া অনূদিত গল্পের সংখ্যা চারশো পঞ্চাশটির ও বেশি।NEINAD এর পক্ষ থেকে অসমিয়া ভাষা-সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য Distinguished Life Membership এর দ্বারা সম্মানিত করা হয়।মোট প্রকাশিত বই আঠারোটি।