বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩

উত্তরকথা, প্রান্ত কথা... পর্ব ১০

‘নদীত ফোটে নদীয়া হোলা’..

নদীর ভিতর নদী শুয়ে থাকে।নদীর মধ্য থেকে তুমুল এক নদী উঠে আসে।হাই তোলে।পায়ে পায়ে গড়িয়ে যায় রাস্তা।গলিপ্তহ।তস্য গলি বস্তির বাচ্চারা গান গায়।গানের গায়ে জড়িয়ে যায় খিস্তিখেউড়।আবার এক একদিন সীমাহিন এক প্রান্তর হয়ে ওঠে পৃথিবী।বাতিদান বেয়ে রক্ত গড়িয়ে নামে।রক্তের দাগ অনুসরণকারী পাখিরদের ডানার নীচে কাঁচপোকা,ফড়িং।জীবন কাটাগাছের দিকে পাশ ফেরে।দেশাচারের নকশির ভিতর হরেকরকম মানুষজন।বিলাপরত স্কুল্বালিকা।গান বাজনার তাড়সে সংকরমনতায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া মাঠ প্রান্তর থেকে উড়ে আসে প্রজন্মপীড়িত কথকেরা।তারপর লোককথার ঢঙে গল্প এগোতে থাকে।অন্ধকারের নদীর পাশে তখন ভূতুড়ে ভাটিখানা।আর চোখে জল আসতেই মাতালেরা সব প্রেমিক হয়ে যায়।প্রান্তবাসীর হাতে হাতে বাঁশি ঘোরে।বাঁশি বেজেও ওঠে আচমকা।তখন হেরম্ব বর্মন উঠে দাঁড়ায়।মহামানব হতে পাবার সুযোগ হেলায় সরিয়ে দিয়ে সে ধুলো-মাটি আর মানুষের আখ্যানমালা সাবলীল বলে যেতে থাকে।অবিরাম তাঁতকল ঘোরে।আর নদীর মধ্যে থেকে তুমুল এক নদী উঠে আসে।



ভালো ভালো গান শুনে বড় হয়ে ওঠা।নানা রঙের মানুষ দেখে দেখে বেড়ে ওঠা। অপমানের পর অপমান,গলাধাক্কা ডিঙিয়ে খোলা আকাশের তলে।আর নতুন শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে উলুধ্বনি ভেসে আসে,রাজবংশী মেয়েদের দলবদ্ধ নাচ।বিবাহ উৎসবের দিকে যাত্রা শুরু করল একটি নিঃসঙ্গ পালক।

এতসব টুকরো,ছেঁড়া খোঁড়া সময় যাপন অভিঞ্জতা সবসময় ঘিরে থাকে এই বহুমাত্রিক জীবনই তো পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে। ইতিমধ্যেই দেখে ফেলা সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম মানুষটিকে।আর গাছের পাতায় আঠা মাখিয়ে সারাদিন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করত বাবুলাল বাঁশফোঁড়।অন্ধকারে শতশত জোনাকি পোকা।লোকজ এই ভুবন যার ভিতর থেকে কোনওদিনই বেরিয়ে আসা হবে না।অথচ ব্যাধ যুবকেরা সব একদিন ভুলেযাবে প্রলাপকথন। আর মাটির ঊঠোন থেকে অনিবার্‍য কিছু গান গোটা জীবন সঙ্গে থেকে যাবে। জীবনের বৃত্তে ঘনঘন আছড়ে পড়বে উড়ন্ত ঘোড়া,টিপছাপ ও হস্তচিহ্ন।
রাস্তায় রাস্তায় উপচে পড়ছে রোদ।মন কেমন করা রোদ। পথচলতি লোকজন সারা শরীরে মেখে নিচ্ছে ছোট শহরের দাউ দাউ রোদ।আর শহরের সমস্ত পুরানো,শতবর্ষ আক্রান্ত ইতিহাসের ছোঁয়া লাগা সেই সব ভূতুড়ে বাড়িগুলির দিকে কী যেন এক চোরাটানের কুহক। আবার বাল্যকালের বন্ধুরা যায় সব আগের মতো। সাইকেলকে ঘনঘন দাঁড়িয়ে পড়তে হয়।জীবন উবু হয়ে বসে পড়ে গেরস্থ বাড়ির সম্পন্ন উঠোনে।উঠোন জুড়ে সদ্য কাটা ধানের আঁটি।ঢেঁকিশালে পোষা বিড়াল।গলায় ঘণ্টা বাঁধা। রাজবংশী সম্পন্ন কৃষকদের ডারি ঘর বা বৈঠকখানা ঘরে বসে দোতারার আওয়াজ শুনি।গেরস্থালীর কাজের ফাঁকে মেয়েরা চটকা গাইছে—

‘আজি কার বা বাড়ির ভোন্দা বিলাই
দুয়ারত আসিয়া করে ম্যাও’

অজস্র আবিস্কারে ভরে উঠতে থাকে জীবন,ঘটনাবহুল বর্ণময়,গনগনে মশালের আলোয় বৃত্তে চুপচাপবসেথাকা জীবন। গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ সারতে থাকা। উত্তরবাংলার লোকায়ত ভুবনের মায়া তার জাদুতে সেই থেকে বন্দি।এবংআচ্ছন্ন।