শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

​চলে গেলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সাংবাদিক হোমেন বরগোহাঞি

অন্যদেশ ডেস্ক , ১২-ই মে ২০২১

আজ সকালে ৬.৫৮ মিনিটে অসমের বৰ্ষীয়ান বিশিষ্ট সাহিত্যিক হোমেন বরগোহাঞিগৌহাটির GNRCত চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ।

মৃত্যুর সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর । কিছুদিন পূৰ্বে কোভিডে আক্ৰান্ত হয়ে তিনি আরোগ্য লাভ করেছিলেন ।

একেধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সম্পাদক ও কবি হোমেন বরগোহাঞির জন্ম হয়েছিল ১৯৩২ সনে ৭ ডিসেম্বর বৰ্তমান লখিমপুর জিলার ঢকুৱাখানাতে।

কটন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্ৰী লাভ করার পর অসম অসামরিক সেবা পরীক্ষাতে উত্তীৰ্ণ হয়ে সরকারী কর্মচারী রূপে চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন । কিন্তু অচিরেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতার জীবন বেছে নিয়েছিলেন হোমেন বৰগোহাঞি ।

১৯৫৮ সালে প্ৰখ্যাত অসমীয়া লেখিকা নিরুপমা বরগোহাঞির সঙ্গে হোমেন বরগোহাঞি বিবাহপাশে আবদ্ধ হন। কিন্তু ১৯৭৭ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় ।

বাল্যকাল থেকে সাহিত্য চৰ্চার প্ৰতি অনুরক্ত ছিলেন হোমেন বরগোহাঞি। ছাত্র অবস্থাতেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন । গল্প-কবিতা দিয়ে তাঁর লেখক জীবন আরম্ভ হয় । গল্পউপন্যাস ছাড়াও অসমীয়া সাহিত্যের সমালোচক হিসাবেও তিনি খ্যাতি লাভ করেন ।

‘ইছমাইল শেখের সন্ধানে , হাতী, গরখীয়া আদি গল্পের স্ৰষ্টা হোমেন বরগোহাঞির প্ৰথম উপন্যাস ‘সুবালা’। তারপর ‘সাউদের পুতেকে’ ‘নাও মেলি যায়’, ‘হালধীয়া চরাইয়ে বাওধান খায়’, ;অস্তরাগ’, পিতাপুত্ৰ, তিমির তীৰ্থ, কুশীলব, মৎস্যগন্ধা, তান্ত্ৰিক, এদিনের ডায়েরী, বিষণ্ণতা, নিসংগতা ইত্যাদি উপন্যাস তাঁকে অনন্যতা দান করে ।

১৯৭৮ সালে ‘পিতাপুত্ৰ’উপন্যাসের জন্য হোমেন বৰগোহাঞি সাহিত্য অকাডেমি লাভ করেন । তা ছাড়াও বরগোহাঞি মেগরের অসম সাহিত্য উপত্যকা , নীলমণি ফুকন পুরস্কার , অসম সরকারের শ্ৰীমন্ত শংকরদেব পুরস্কার, মৎসেন্দ্ৰ পুরস্কার ইত্যাদি পুরস্কারে ভূষিত হন ।

আত্মানুসন্ধান, মোর সাংবাদিক জীৱন, ‘ধুমুহা আৰু রামধেনু’ (দুটা খণ্ডে) ও মোর হৃদয় এখন যুদ্ধক্ষেত্ৰ ইত্যাদি আত্মজীবনীমূলক গ্ৰন্থও রয়েছে হোমেন বৰগোহাঞি এর । তাঁর একমাত্ৰ কাব্য গ্রন্থ ‘হৈমন্তী’।

২০০২ সালে ডিব্ৰুগড় অধিবেশনের সময় অসম সাহিত্য সভার সভাপতি রূপে নিৰ্বাচিত হন । তাঁর একান্ত চেষ্টায় অসমীয়া বিশ্বকোষের সাতটা খণ্ড প্ৰকাশিত হয় ।

সাপ্তাহিক নীলাচলে আরম্ভ হয় তাঁর সাংবাদিক জীবন । একাধিক সংবাদ পত্রের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হন তিনি । সূত্ৰধার, নাগরিক, সাতসরী ইত্যাদি পত্রিকা , অসম বাণী, আমার অসম, অসমীয়া দৈনিক বাতরি , নিয়মীয়া বাৰ্তা ইত্যাদি সাপ্তাহিক ও দৈনিক সংবাদ পত্রের কখনো সম্পাদক ও মুখ্য সম্পাদকের দায়িত্ব গ্ৰহণ করে অসমের সংবাদ জগতে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন । শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি নিয়মীয়া বাৰ্তার মুখ্য সম্পাদক রূপে কর্মরত ছিলেন ।

‘বিংশ শতাব্দীর সন্ধানত’, সোণারাম চুতীয়া: এজন অসাধারণ সাধারণ মানুহ ইত্যাদি মূল্যবান গ্ৰন্থের তিনি ছিলেন সম্পাদক ।

‘মোর সাংবাদিক জীবন’ ও ‘আশী দশকের দস্তাবেজ’ অসমের সমসাময়িক ৰাজনৈতিক ইতিহাসের রূপরেখা অংকন করেছিলেন হোমেন বরগোহাঞি । তাঁর প্রয়াণে অপরিসীম ক্ষতি হয়ে গেল সাহিত্য ও সংগীত জগতের ।

বিভিন্ন ভাষাতে অনূদিত হয়েছে তাঁর সাহিত্যসমুহ । অন্যদেশ ওয়েবে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল বঙ্গানুবাদে , হলদে পাখি বাও ধান খায়। অনুবাদ করেছিলেন বাসুদেব দাস ।