মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

হলদে পাখি বাও ধান খায়, পর্ব -২

(দুই)

নিরবচ্ছিন্ন এবং আদিঅন্তহীন নানা চিন্তার স্রোতে মনটা ছেড়ে দিয়ে রসেশ্বর হাল বেয়ে চলেছে। মাঝেমধ্যে অবশ‍্য তার মনটা হোঁচট খেয়ে থেমে যায়। গ্রামের ঠিক পেছনেই তার জমি। শূন্য মাঠে গ্রামের মহিলারা বাগান পার হয়ে এসে তার জমিতে বাহ্য ক্রিয়াদি করে যায়।হাল বাওয়ার সময় যখন নোংরা মাড়াতে হয় তখন রসেশ্বরের খুব রাগ হয় এবং মহিলাদের উদ্দেশ্যে সে নানা অশ্লীল গালিগালাজ করতে শুরু করে। একবার সে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ের মতো গরু গুলির পিঠে বেশ কয়েক ঘা বসিয়ে দেবার পরে অশ্লীল শব্দগুলো উচ্চারণ করেছে মাত্র তখনই হঠাৎ কারও কণ্ঠস্বর এসে তার কানে বাজল 'কিহে, এই ধরনের অশ্লীল ভাবে কাকে গালিগালাজ করছ ? আশেপাশে তো কেউ নেই।‘

রসেশ্বর চমকে ফিরে তাকাল। সে তাকিয়ে দেখে সনাতন শর্মা তার জমির উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রসেশ্বর খুব অবাক হল। সনাতন শর্মা ওদের অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি জমির মালিক, সবচেয়ে বড় ঠিকাদার, সবচেয়ে বড় নেতা, সেরকম একজন মানুষ সকালবেলা এসে বিষ্ঠায় মাখা মাখি হয়ে থাকা তার জমির উপরে কেন দাঁড়িয়েছেন? পূর্বের সূর্য পশ্চিমে উদিত হতে পারে কিন্তু সনাতন শর্মা রসেশ্বরের সঙ্গে দেখা করার জন্য সকালে এসে মাঠের কাঁদা মাটিতে পা রাখবে এই ধরনের কথা কখন ও সম্ভব হতে পারে না। নিশ্চয় তাঁর অন্য কিছু মতলব আছে। লাঙ্গল চেপে ধরে গরুদুটোকে থামিয়ে রেখে রসেশ্বর মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিল। তারপর সনাতন শর্মার দিকে তাকিয়ে সে বলল --'প্রভু,আজ দেখছি কিছু একটা অঘটন ঘটবে বলে মনে হচ্ছে। আপনি ভোর বেলাতেই এই জলকাদায় পা রাখতে চলে এলেন যে বড়?'

'কিছু একটা গরজ না থাকলে কী আর আসি বাবা?' গরজ টেনে এনেছে। দেখি, এদিকে আয়তো রসেশ্বর,একটা কথা বলি। আমি আর কাদা-জলে নামব না।

রসেশ্বর যেখানের হাল সেখানেই রেখে দিয়ে যন্ত্রচালিত মানুষের মতো সনাতনের কাছে এগিয়ে গেল। সে অনুভব করল যে তার বুকটা সামান্য ধুকপুক করতে শুরু করেছে। ভয়ের কোনো কারন সে কল্পনাও করতে পারছে না। কিন্তু একথা অস্বীকার করে লাভ নেই যে সে মনে মনে কিছু একটা ভয় অনুভব করতে শুরু করেছে।

রসেশ্বর কাছে যেতেই সনাতন বলে উঠল-- 'রসেশ্বর, তোকে একটা কথা বলব বলে এলাম। আমি নিজে না এসে অন্যকেও পাঠিয়ে কথাটা বলে দিতে পারতাম। কিন্তু পরে মনে হল যে অন্যের মুখে শুনলে তুই হয়তো আমাকে ভুল বুঝবি তুই আমার একেবারে নিজের মানুষ, নিজের ছেলের মতো, তুই আমাকে ভুল বুঝবি সেটা আমি চাইনা।'

এতটুকু পর্যন্ত বলে সনাতন এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল। এদিকে রসেশ্বর ভীষণ অধৈর্য হয়ে উঠেছে। তার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে --'এসব ভূমিকা রাখুন, কী বলতে এসেছেন তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন।' কিন্তু সনাতনের মুখের সামনে এভাবে কথা বলতে সে সাত জন্মেও সাহস জোগাতে পারবে না। গায়ের জোরে মনের অস্থিরতা দমন করে সে সনাতনের মুখ থেকে আসল কথাটা খসে পড়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে রইল।সনাতন পকেট থেকে গোল্ড ফ্লেক সিগারেটের একটা প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিল। তারপরে রসেশ্বরের দিকে একটা এগিয়ে দিয়ে বললেন--'আহা, বৃষ্টিতে ভিজে গেছিস,একটা সিগারেট খা।'

রসেশ্বর সিগারেটটা হাত পেতে নিয়ে বলল--' এসব দেবতাদের ভোগ্য বস্তুর আমরা কি উপযুক্ত প্রভু ? দিয়েছেন যখন, দিন। আপনাদের কল‍্যাণেই নাহয় একটান মেরে দেখি।'

সনাতন বললেন --'একটা কথা আছে শোন, এটাতো জানিস, এই যে তোর এই জমিটা,এটা আসলে আমার। এতদিন তোকে ভালোবেসে চাষ করতে দিয়েছিলাম, তোর অবস্থা দেখে আমি কিছুই বলিনি। তবে এখন জমিটার আমার প্রয়োজন হয়েছে। আমার কাজ-কারবার আগে থেকেই পড়ে এসেছে।আমরা লোকের বাড়িতে ঘন্টা বাজিয়ে চালের গুড়ো খেয়ে বেঁচে থাকা বামুন মানুষ। চাইলেই চট করে একটা নতুন কারবার শুরু করতে পারি না। এখন জমিটাকে কেন্দ্র করে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা না করলে বুড়ো বয়সে খাব কি? তাই তোকে বলতে এলাম,-- 'তুই আর জমিতে হাল দিস না। এই বছর থেকে জমি টা আমার চাই।'

সনাতনের কথা শুনে রসেশ্বর কিছুক্ষণ বজ্রাহত মানুষের মত অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সে প্রথমে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারল না। অতিশয় বিচলিত হয়ে সিগারেটটাতে আরও একটা টান দিতে গিয়ে সে দেখল তার হাত বেশ কাঁপতে শুরু করেছে। ঠোঁটে সিগারেটটা লাগাতে পারছে না। কোনো এক ফাঁকে সিগারেটটা তার হাত থেকে পড়ে গেল।

সে শুকিয়ে যাওয়া জিভ দিয়ে ঠোঁটটা চেটে ভিজিয়ে নিয়ে কোনোভাবে বলে উঠল--' প্রভু, আপনি এইসব কী বলছেন? সেই ছোটবেলা থেকেই আমি লাঙ্গলের মুঠি ধরছি। তখন থেকে আমি এই জমিতে চাষ করে কোনোভাবে জীবন ধারণ করে চলেছি। এখন, এতদিন পরে হঠাৎ এই জমিটা কীভাবে আপনার হয়ে গেল?'

'তোর কোনো দোষ নেই রসেশ্বর'-- সনাতন কণ্ঠস্বরে সহানুভূতি ঢেলে দিয়ে বললেন--' তুই তখন খুবই ছোট ছিলি, সেসব কথা তোর মনে থাকার কথা নয়। অবশ্য গ্রামের বয়স্ক মানুষরা এসব কথা জানে। তাদের জিজ্ঞেস করলেই তুই সত্যি মিথ্যার প্রমাণ পেয়ে যাবি। প্রথমে এই জমিটা তোদেরই ছিল কিন্তু ১৯৩৭ সালে তোর বাবা এই জমিটা আমার কাছে বন্ধক রাখে। এ কথাটা তুই জানিস ?'

বন্ধক রাখার কথাটা সত্যি'--- আলোচনার একটা সূত্র পেয়ে রসেশ্বরের মৃত দেহে যেন প্রাণ ফিরে এল।---'কিন্তু তার কয়েক বছর পরে --- বাবার মৃত্যুর ঠিক আগের বছর--- আপনাকে সমস্ত টাকা পয়সা হিসেব করে দিয়ে জমিটা মুক্ত করে নেওয়া হয়েছিল।কথাটা আমি নিজেই ভালোভাবে জানি। আপনি কথাটা ভালোভাবে মনে করে দেখুন প্রভু।এই গরিবকে এসব নিয়ে অনর্থক শাস্তি দেবেন না। আপনার কথা শুনে আমি ব্রহ্মতালুতে বিষধর সাপের দংশন অনুভব করছি প্রভু ।'

‘শোন রসেশ্বর'-- সনাতন শান্তভাবে বললেন-- 'আমি ব্রাহ্মণ হয়ে এই বুড়ো বয়সে মিথ্যা কথা বলে কেন পাপের ভাগী হতে যাব? বিনা প্রমাণে আমি কোনো কথা বলি না। তোরা যে জমিটা আমাকে বন্ধক দিয়ে টাকা নিয়েছিলি তার প্রমাণস্বরূপ সমস্ত কাগজপত্র আমার হাতে আছে। যে কয়েকজন মানুষ সাক্ষী হয়ে,সই করেছিল সেই মানুষগুলো এখন ও বেঁচে আছে। কিন্তু তোরা যে টাকা শোধ করে জমিটা মুক্ত করে নিয়েছিলি তার প্রমাণ হিসেবে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারবি কি? পারবিনা, কারণ তোরা টাকা পরিশোধ করিস নি' জমি ও মুক্ত করা হয়নি।'

সনাতনের আসল উদ্দেশ্যটা রসেশ্বর এইবার বুঝতে পারল।

সে প্রায় আর্তনাদ করে উঠল--'এ ধরনের অধর্মের কথা মুখে আনবেন না প্রভু,ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে একটা পরিবারের বধের ভাগী হবেন না। কাগজ পত্র নেই বলেই দিনকে রাত বলে চালিয়ে দিতে পারেন? আমাদের গ্রামের মানুষকে কে কখন কথায় কথায় কাগজপত্র করতে দেখেছে?আমাদের মানুষের মুখের কথাই পাথরের রেখা। বাবা কাকার দিন থেকে এই জমিটাই আমাদের একমাত্র সম্বল। এখন আইনের মারপ্যাঁচ দেখিয়ে ওকালতির কথা বলে জমিটা আমার থেকে কেড়ে নিয়ে আমাকে জীবন্ত মেরে ফেলবেন না প্রভু।আমি আপনার পায়ে পড়ছি। এই জমি আমার,আর এটা সবসময়ই আমার হয়ে থাকবে।'

সংকটে পড়া জন্তু যেভাবে শেষবারের মতো মরণ -পণ করে গর্জে ওঠে তেমনই রসেশ্বরের কথাগুলির মধ্যে একটা অপ্রত্যাশিত কঠিনতা ফুটে উঠল।

সনাতন শর্মা আরও একটা সিগারেট জ্বালালেন।তিনি এত দ্রুত ধৈর্য হারানোর মানুষ নন। তিনি অবিচলিত কণ্ঠে বললেন, 'তুই যে বললি ---এই জমি তোর, আর চিরকাল থাকবে তোর নামে।তোর নামে পাট্টা- পরোয়ানা আছে কি?

' কেন থাকবে না? আজ কুড়ি পঁচিশ বছর ধরে আমি নিজের হাতে জমির খাজনা দিয়ে আসছি' বিজয় গর্বে রসেশ্বর ঘোষণা করল।

'খাজনা দিলেই জমি তোর হয়ে যায়না গাধা '--সনাতনের কন্ঠে এবার বিদ্রূপের সুর ফুটে উঠল-- আমি ভালোভাবে তোর সঙ্গে কথাটা নিষ্পত্তি করব ভেবেছিলাম কিন্তু তুই বুঝতে না চাইলে আমি আর কী করব?শোন, রসেশ্বর এবার সেটেলমেন্ট অফিসে আমার নামে এই জমির পাট্টা হয়েছে। বিশ্বাস না করিস যদি সাব ডেপুটির অফিসে গিয়ে দেখে আসিস। তুই এখন চাষ-বাস সামলে নিয়ে বাড়ি ফিরে যা। পুনরায় আর এই জমিতে পা রাখবি না। তুই আমার নিজের মানুষ। আমি তোর সঙ্গে মামলা-মোকদ্দমা করতে চাইনা। তোর বিরুদ্ধে পুলিশে ও অভিযোগ করতে চাইনা।তুই শক্ত সমর্থ খেটে খাওয়া মানুষ। কিছু একটা করে নিশ্চয়ই খেতে পারবি। আমি বুড়ো বামুন। জমিটাকে দেখাশুনা না করলে কী খাব ? আচ্ছা এখন যাই। তুই খারাপ টারাপ পাস না।'

রসেশ্বরের মুখের দিকে না চেয়ে কথাটা বলে সনাতন শর্মা নিজের পথে এগিয়ে গেলেন।

রসেশ্বর সেখানেই বসে পড়ল। কাদা-জলের কথা ভাবার মতো তার আর চেতনা ছিল না। তার মাথাটা হঠাৎ ঘুরে যাবার মত করে উঠায় কিছু সময় সে কোনো কিছুই চিন্তা করতে পারল না। কিছুক্ষণ পরে কিছুটা প্রকৃতিস্থ হয়ে আঁকাবাঁকা পদক্ষেপে সে গরু দুটোর দিকে এগিয়ে গেল। লাঙ্গল থেকে গরুর জুটিকে খুলে দিয়ে সে বাড়ির দিকে হাটতে লাগল। বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে রসেশ্বর দেখল আলের ওপারে বীজধান ক্ষেতে ঢুকে একটা গরু বীজধান খাচ্ছে।চাষের জমিই যেখানে নেই সেখানে বীজধান থেকে কী হবে সেই চিন্তা তার মনে এল না। আগুনে ঘি ঢালার মতো তার মাথাটা দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। একটা লাঠি হাতের মুঠিতে শক্ত করে ধরে সে খুব জোরে জোরে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

বাইরের ঘর,মহিলাদের বসার ঘর,রান্না ঘর—সবগুলি ঘরেই সে স্ত্রীকে খুঁজে বেড়াল,কিন্তু কোথাও মানুষটা নেই। সে বাড়ির পেছনের বাগানের দিকে দৌড়ে গেল।

স্ত্রী এইমাত্র বাইরে থেকে ঘুরে এসে স্নান করতে শুরু করেছিল মাত্র। রসেশ্বর তাকে দেখতে পেয়েই বিদ্যুতের গতিতে দৌড়ে গিয়ে গরুর মতো মানুষটাকে পেটাতে শুরু করল।

এধরনের অতর্কিত আক্রমণের জন্য রসেশ্বরের স্ত্রী মোটেই প্রস্তুত ছিল না। হালের লাঠির বেশ কয়েকটি কোপ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে লাফিয়ে উঠে হাউমাউ করে চিৎকার করে উঠল। কিন্তু তার চিৎকারে ভ্রুক্ষেপ না করে রসেশ্বর চোখ-কান বুজে তাকে মারতে শুরু করল। রসেশ্বরের স্ত্রী বাঁহাতে বুকের মেখেলাটা ধরে রেখে ডান হাতে একটা বাটিতে গায়ে জল ঢালতে চলেছিল।

কিন্তু স্বামীকে বাধা দিতে গিয়ে সে দিক বিদিক শূন্য হয়ে বাঁহাতে ধরে রাখা মেখেলাটা ছেড়ে দিল। চোখের নিমেষে মানুষটা সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে পড়ল। রসেশ্বররের কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি নেই। মুখ দিয়ে একটিও শব্দ না করে সে কেবল গায়ের জোরে তাকে মেরে চলেছে। সম্পূর্ণ উলঙ্গ ভেজা শরীরে লাঠির প্রচন্ড প্রহারে শরীরের জায়গায় জায়গায় খন্ড খন্ড চামড়া আর মাংস বেরিয়ে এল। গায়ের মেখেলাটা খসে পরার মুহূর্তে এক নিমিষের জন্য সে প্রহারের যন্ত্রণা ভুলে গেল,দ্রুত মেখেলাটা বুকের উপর পর্যন্ত টেনে দিয়ে সে ঘরের দিকে দৌড়ে গেল।রসেশ্বর ও তার পেছন পেছন তাড়া করে গেল।।এবার রসেশ্বরের স্ত্রীর মনে ভীষণ ভয় হল। এর আগেও সে স্বামীর হাতে মার খেয়েছে। কিন্তু এই ধরনের গরু পেটা কখন ও তাকে হতে হয়নি। এত মার খাওয়ার পরেও যদি সে ঘরের ভিতরে গিয়ে আবার তাকে মারতে উদ্যত হয় তাহলে আজ তার মৃত্যু হবে। গায়ের সমস্ত শক্তিতে সে চিৎকার করে উঠল

।'এই রক্তপিপাসু রাক্ষসটা আজ আমাকে মেরে শেষ করে ফেলবে, কে কোথায় আছিস রক্ষা কর।'

এভাবে চিৎকার করে সে নিজের ঘরে ঢুকে তখনই পাশের বাড়ির ডম্বরুদের ঘরের দিকে দৌড়ে গেল। বৃষ্টিতে তাদের উঠোনটা পেছল হয়েছিল। যাবার সময় স্ত্রী সেখানে পা পিছলে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সে আর ও একবার চিৎকার করে উঠল। তার চিৎকার শুনে ডম্বরুরা ছাড়াও আশেপাশের দু-একজন মানুষ এসে উঠোনে ভিড় করে দাঁড়াল। তার অবস্থা দেখে সবাই হা-হুতাশ করতে লাগল। ঠিক সেই সময় রসেশ্বর সেখানে এসে উপস্থিত হল। মহিলা এবং ছেলে মেয়েদের ভিড় ঠেলে সে পুনরায় স্ত্রীকে মারতে শুরু করল তবে এবার সে বেশি প্রহার করতে পারল না। মহিলারা স্ত্রীকে ঘিরে দাঁড়ালো এবং দুয়েকজন তার হাত থেকে জোর করে লাঠিটা টান মেরে কেড়ে নিয়ে তাকে ঠেলতে ঠেলতে নিজের ঘরের দিকে পাঠিয়ে দিল।

এখানে সেখানে লুকিয়ে থাকা রসেশ্বরের ছেলেমেয়েরা মায়ের গগনবিদারী চিৎকার শুনে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এসে ডম্বরুদের উঠানে পৌঁছাল এবং মায়ের অবস্থা দেখে প্রত্যেকেই একসঙ্গে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। সেখানে দলবেঁধে মহিলারাও, মরা কাক দেখলে শতশত কাক এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে একসঙ্গে কলরব করার মত রসেশ্বরের স্ত্রীকে ঘিরে ধরে কলরব করতে লাগল।কেউ কেউ রসেশ্বরকে গালি গালাজ দিতে শুরু করল।আবার কেউ নারী জন্মকে ধিক্কার দিতে শুরু করল।কেউ কেউ সমস্ত পুরুষ জাতিকে অভিশাপ দিতে শুরু করল।এই সমস্ত কলরবের মধ্যে একজন বুড়ি মহিলা চিৎকার করে উঠল—‘ এই যে তোরা নিজেদের মধ্যেই কলরব করছিস, এদিকে মানুষটার কি অবস্থা হয়েছে সেটা লক্ষ্য করেছিস? ওকে ভেতরে তুলে নিয়ে গিয়ে সেঁক না দিলে আজ বোধহয় মরেই যাবে।‘

তখনই মহিলাদের হুঁশ ফিরে এল। দুই একজন ধরাধরি করে রসেশ্বরের স্ত্রীকে ডম্বরুদের ঘরের ভিতরে তুলে নিয়ে গেল।


ক্রমশ