বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

হরিদ্বার থেকে প্রয়াগরাজ -- পূর্ণতার সন্ধানে, পর্ব -৩

বাপরে , পৃথিবীর জন মানব কী আজ একসঙ্গে প্রয়াগের রাস্তায় সমুদ্র তাণ্ডবে বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ার তুলবে বলে নেমে পড়েছে ? এত লোক ! সকলেই সঙ্গম অভিমুখে ? রাস্তায় গাড়ি বন্ধ । থিক থিক জনসমুদ্র । ভয়ে শরীর কেঁপে উঠল । মাথার উপর সূর্যদেব দলে বলে বিপুল উদ্যোগে তার রথ নিয়ে বিশ্ব পরিক্রমায় বের হয়েছেন । রোদ কাতর , ভিড় কাতর আমার আমিকে নিয়ে মহা নাজাহাল অবস্থা । রাস্তায় হাঁটছে কে ? উত্তর কেউ না । হাঁটার প্রয়োজন এবং সুবিধা দুই-ই নেই । কারণ সমুদ্রে যেমন জলে নামলে জল নিজেই ইচ্ছেমতো শরীর নিয়ে লাফালাফি খেলে , ঠিক তেমনি জনসমুদ্রের চরিত্রে সমতার খামতি নেই । মানুষের ঢলে ঢলানি কম দেখাচ্ছে না । চলছি অথচ হাঁটছি না । তবে পাশাপাশি হাঁটার কোন উপায় নেই । আগে পিছে লাইন করে পথে নামলাম শঙ্কার উপর ভেচকি কেটে । ভিড়ের ভিতর থেকে আওয়াজ উঠল , ব্যাগ সামলাও । মোবাইল ব্যাগে রাখো । দেবাশীষবাবুর গলা । আমরা অদৃশ্য দড়িতে নিজেদের বেঁধেছি । সামনের জনকে পিছনের জন ধরে রেখেছে । আমি যথারীতি দেবাশীষবাবুকে ধরছি । আমার ইহজীবনের কর্ণধার । এই প্রয়াগ বৈতরণী ও তাঁকে ধরেই পার হব । আমার পিছনে কর্কট বিজয়িনী বোন পূর্ণিমা । পাশাপাশি হাঁটার মজা নিয়ে বিশ্রম্ভ আলাপ করে মজার বেড়ানো কুম্ভে শুধু অসম্ভব নয় , নৈব চ ।

চল পথ পথিক । কাতারে কাতারে লোক । লক্ষ্য সংগম । যত হাঁটছে , তার চেয়ে ঠেলছে বেশি । একবার হাত ছাড়লেই কে যে কোথায় ছিটকে পড়বে । এই ভিড়ে আর মিলবে না ঠোর-ঠিকানা । তখন আমি কার ? কে তোমার ? পায়ের কোন কাজ নেই , জনতার ঠেলা পায়ের কাজ করে দিচ্ছে । শরীর চলছে জোয়ারের টানে । বেশির ভাগ-ই দেহাতি লোক । পুণ্য লোভাতুরা । ‘কেন ছুটছো গো দিগবিদ্বিগ শূন্য হয়ে ? কি পেতে যাচ্ছ শুনি’ ? স্রোতের টানে ভেসে আসা গুজরাটি মহিলাকে প্রশ্ন করেই বসলাম । তিনি অবাক বিস্ময়ে আপাদমস্তক একবার দেখে নিলেন । যেন এক বেকুবকে জরিপ করে নিলেন ।‘ লো কী বলছো কুম্ভে লোকে কেন আসে ? আ্যঃ ! স্নান করতে । পুণ্য স্নান । গ্রাম উঠে এসেছি । মেলা মানুষ একসঙ্গে । প্রচুর খাওয়া দাওয়া’ । পিছন থেকে বউটিকে কেউ ঠেলে দিল । বেচারি বোঁচকা সমেত হুড়মুড়িয়ে পড়ল সামনের জনমিছিলে । কয়েকটি মুখের অশ্রাব্য বাক্যবাণ নিক্ষিপ্ত হল বটে কিন্তু বউটি প্রতি উত্তর না করে সাগরে মিশে গেল । সংসারের যাঁতাকল তাঁকে ম্যানেজমেন্ট শিখিয়ে দিয়েছে ।

রোদ বাড়ছে । বেয়াডা পেটের ভিতর চুর চুর খিদে জন্মাছে । দৌড়ুতে দৌড়ুতে সামনের খামছে ধরা নীল সার্টকে চেঁচিয়ে বললাম ‘ খিদেপায় নি ‘? ‘ মশকরা করছ , এগিয়ে চলো । আধা ঘন্টাও হয় নি বের হয়েছি , খিদে পেয়েছে ? পেলেই হল ?’

পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে পূর্ণিমাকে বললাম , ভাই আমার তো খিদে পেয়েছে । তোর পায় নি ? পূর্ণিমা মুচকি হেসে বলল ,’দাদাকে খেপিয়ে লাভ নেই । আগে পিছে করার কোন উপায় নেই । এ কুম্ভমেলার পদযাত্রা বাবা । খিদে পেতে নেই । পুণ্য চলে যাবে যে ...'


চলবে ...