শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

স -এ সতীদাহ,পর্ব ১

স -এ তীদা ,


ই লাভ ইউ রাজা

"... বালকের মৃত পিতার দেহ, চিতার উপরই চিৎ করিয়াশোয়ানো ছিল। চিতাটি চারিহস্ত উচ্চ। তাহা কাষ্ঠ ও খড় দ্বারা রচিত। এই স্ত্রীলোকটি বড়ই ভয় পাইয়াছিল বলিয়া বোধ হইল। কেন না তাহার কম্পিতাবস্থা দেখিয়া দুই- জন ব্রাহ্মণ তাহাকে ধরিয়াছিল। তাহার অবস্থা দেখিয়া আমার বোধ হইল, তাহাকে সিদ্ধি বা অন্য কোনরূপ মাদক দ্রব্য খাওয়ান হইয়াছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী লোকজনকে জিজ্ঞেস করায় তাহারা একথা অস্বীকার করিল। শ্মশানমধ্যে সমবেত জনতার দিকে সেই স্ত্রীলোক স্থিরদৃষ্টিতে চাহিয়া আছে। তাহার মুখভাব উদ্বেগশূন্য ও চিত্ত যেন উৎসাহপূর্ণ। ব্রাহ্মণেরা তাহাকে সঙ্গে করিয়া গঙ্গাতীরে লইয়া গেল। সে গঙ্গায় স্নান করিল। স্নানের সময়ে সে যে কাপড় পরিয়াছিল, তাহা ছাড়াইয়া লইয়া তৎপরিবর্তে একখানি লাল রেশমী শাড়ী (চেলী) তাহাকে পরিধান করান হইল। স্নানান্তে এই লাল কাপড় পরিয়া পুনরায় শ্মশানে আসিবার পর তাহার গলায় ফুলের মালা দেওয়া হইল। এই সময়ে ব্রাহ্মণেরা তাহাকে প্রশ্ন করিল৷ ' তুমি যে স্বামীর সহিত সহমৃতা হইতে যাইতেছ, তাহা কি তোমার নিজের ইচ্ছায়, না কেহ তোমাকে জোর করিয়া বা বুঝাইয়া সুঝাইয়া এই কার্য্যে ব্রতী করিয়াছে?' সেই স্ত্রীলোক ইহার কি উত্তর দিল, কোলাহলের জন্য তাহা শোনা গেল না।....তৎপরে সেই স্ত্রীলোক চিতার উপর উঠিয়া স্বামীর পার্শ্বে শয়ন করিয়া তাহার কন্ঠালিঙ্গন করিল। এই চিতার চারিপার্শ্বে ছয়টি বাঁশের খুঁটি পোতা হইয়াছিল। এই বাঁশের খুঁটিগুলিতে আবদ্ধ দড়ির একদিক টানিয়া লইয়া চিতার উপরিস্থ দেহ দুইটিকেও সেই দড়ি দিয়া ছয় স্থানে বাঁধা হইল। ইহার কারণ এই, জ্বলন্ত অগ্নি মধ্য হইতে উঠিবার কোনরূপ চেষ্টা করিলেও সেই স্ত্রীলোক সম্পূর্ণ অক্ষম হইবে। আমি যে লোকটির কাছে দাঁড়াইয়া তাহাকে এতক্ষণ পর্যন্ত এ সম্বন্ধে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে ছিলাম- তাহাকে বলিলাম, 'এই স্ত্রীলোক যখন স্বেচ্ছায় মরিতে প্রস্তুত, তখন তাহাকে এরূপভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিবার প্রয়োজন কি?' তাহাতে সেই লোকটি বলিল, এরূপভাবে বাঁধিবার কারণ আর কিছুই নহে, অগ্নি জ্বলিয়া উঠিলে যত বড়ই সহিষ্ণু ও সাহসী হউক না কেন, একটা ভয় পাইবার সম্ভাবনা। এইজন্যই ঐ ছয়টি বাঁশের খুঁটির সহিত ছয় স্থানে চিতায় ন্যস্ত উভয় দেহ দুইটিকে বাঁধা হইয়াছে।' ইহার পর তাহার সঙ্গীরা সেই চিতার উপর আরও কাষ্ঠ এবং খড়ের আঁটি চাপাইয়া দিল।তাহার উপর কয়েক পাত্র ঘৃত ঢালিয়া দিল।এই সমস্ত অনুষ্ঠানে অনেকটা সময় ব্যয় হইয়াছিল। জানি না এই সময়ে সেই হতভাগ্য রমণীর মনের অবস্থা কিরূপ হইয়াছিল। তাহার এ যন্ত্রণা মৃত্যুযন্ত্রণা অপেক্ষাও ভয়াবহ। তখনও লোকে 'আরো কাঠ চাই' বলিয়া চিৎকার করিতেছে। সমস্ত আয়োজন শেষ হইলে তাহার সেই জ্যেষ্ঠ পুত্র আসিয়া খড়ের নিম্নে আগুন ধরাইয়া দিল। মুহুর্ত মধ্যে দাউ দাউ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল। দুইজন লোক দুইটা বাঁশ দিয়া জ্বলন্ত দেহদুটিকে চাপিয়া রহিল। যেদিকে লোকে বাঁশ দিয়া চাপিয়া ধরিয়াছিল, অগ্নির উত্তাপ সেখানে খুব বেশী হওয়ায়, অন্য লোকে দাহকারীদের মাথায় জল ঢালিয়া দিল। আরও কাঠ চাপান হইল।ক্রমে ক্রমে সেই জ্বলন্ত চিতার অঙ্গারময় অবস্থার সহিত সেই স্বামীগতপ্রাণা রমণীর সব শেষ হইল।'

আই লাভ ইউ রাজা। তুমি না থাকলে সকালটা এত মিষ্টি হোত না। হয়তো আমারও এই অবস্থা হোত। লাল পাড় সাদা শাড়ির সংগ্রহ আমার কিছু কম নেই, তবু নরকের দ্বার, মায়াবী কামিনীকাঞ্চন বলে গাল পাড়া কোন কল্পবৃক্ষের কাছে ঘোমটা দিয়ে নত হতে ইচ্ছে করে না আর, নজরে মিলুক না মিলুক, দিনকে দিন দিলের ধড়ক বেড়ে যায় তোমার জন্য।

আই লাভ ইউ রাজা।প্রণাম টোনাম কর‍তে পারব না।মাপ কর।প্রাতঃস্মরণীয়, প্রণম্য এসব শব্দ কাস্টমাইজড হয়ে গেছে অনেকদিন। আর্কিটাইপ আদলও ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে মাইক্রো মিলি সেকেন্ডে। তার চেয়ে তুমি ফ্রেমে থাকো।

আমি প্রেমে থাকি।


তথ্যসূত্র ঃ কলিকাতা সেকালের ও একালের/ হরিসাধন মুখোপাধ্যায় / ১৭৮৫ সালের কলিকাতা গেজেটে প্রকাশিত হয় এই ঘটনা।

চলবে ...