বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

বাংলাদেশের বিহারী মুসলমানরা না ঘর-কা না ঘাটকা

১৯৪৬ সালে বিহারে দাঙ্গার কারণে দেশভাগের পর অনেক বিহারী মুসলমান পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান | বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পর সেখানে বিহারী মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয় নি। এই বিহারী মুসলমানদের সকলেই বিহার থেকে যান নি। অনেকেই উত্তর প্রদেশ কিংবা রাজস্থান থেকে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে এরা সংখ্যায় ছিলেন প্রায় দশ লক্ষ। পূর্ব পাকিস্তানের উপর যখন উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয় তখন তারা বাংলার পরিবর্তে উর্দু ভাষাকে সমর্থন করে মিছিল টিছিল করে বাংলাভাষীদের বিরাগভাজন হোন। পরে ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানী সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের উপর আর্মি অপারেশন চালায় তখন এই বিহারী মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেক যুবকরা পাক-আর্মিতে যোগদান করে মুক্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। অন্যরাও পাকিস্তানকেই সমর্থন করেন। তারা ভেবেছিলেন পাকিস্তান জয়ী হবে এবং তারা বাঙালীদের উপর রাজ করবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হলো না। ভারতীয় আর্মির কাছে পাক আর্মি সারেন্ডার করল এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হলো। এরপর মুক্তি বাহিনীর যোদ্ধারা এই বিহারী মুসলমানদের অনেককে হত্যা করে। তবে শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পর বেশ কিছু আইন বানিয়ে এই বিহারী মুসলমানদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি কেড়ে নেন। এমন কি পুরুষদের পকেটে হাত ঢুকিয়ে খুচরা টাকা পয়সাও কেড়ে নেওয়া হয় যাতে বিড়ি কিনে খেতেও না পারে। ১৯৭২ সালেই এদের স্থান হয় রিফিউজি ক্যাম্পে। এরপর পাকিস্তান সরকার এদের পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য অঙ্গীকার করে। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে যেতে না পারায় ক্ষেপে ক্ষেপে এই বিহারী মুসলমানদের পাকিস্তানে নিয়ে যায়। কিন্তু পাঁচ লক্ষকে নিয়ে যাবার পর এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে পড়ে। বাকি পাঁচ লক্ষকে আর নিয়ে যায় নি। বাংলাদেশ সরকার তখন এই পাঁচ লক্ষকে নাগরিকত্ব দিতে চেয়েছিল কিন্তু তারা ভাবলেন একবার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে নিলে পাকিস্তান আর তাদের নিয়ে যাবে না। তাই তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু অনেক বছর পার হয়ে যাবার পর বুঝতে পারেন যে পাকিস্তান আর তাদের নিয়ে যাবে না। তাই তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানান তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এতে সাফ ইনকার করে দেয়। এই বিহারী মুসলমানরা আজ অব্ধি বাংলাদেশে আছেন বটে তবে তারা না ঘরকা না ঘাটকা। তাদের কাছে কোন দেশেরই নাগরিকত্ব নেই। সীমান্ত পেরিয়ে যে সব বাংলাদেশীরা ভারতে আসছেন তাদের অনেকেই এই বিহারী মুসলমান।


-- মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়