বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

বইমেলা

পৃথিবীর অনেক দেশেই আয়োজন করা হয় বই মেলার। বই প্রেমীদের ভিড় থাকে সেখানেও। হয়তো ফাল্গুন কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারির মতো রঙিন হয়না, তবে উৎসবের আমেজ কোনো অংশেই কম থাকে না অন্য দেশের বই মেলাতে। জেনে নিন নানা দেশের বই মেলা সম্পর্কে। সুযোগ থাকলে ঘুরেও আসতে পারেন ভিন্ন আমেজের খোঁজে।

কলকাতা বইমেলা: পাশের দেশ ভারতের কলকাতায় অনেক বড় পরিসরে আয়োজন করা হয় বইমেলার। ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং লন্ডন বইমেলার পরের স্থানেই আছে কলকাতা বইমেলা। অর্থাৎ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলা এটি। কলকাতা বইমেলা মেলা শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। কলকাতার বই পড়ুয়াদের আনাগোনার পাশাপাশি ভাষার মিল থাকার কারণে বাংলাদেশের অনেক পাঠকের সমাগমও ঘটে এই মেলায়। এছাড়াও ভারতের জয়পুরে জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয় জয়পুর সাহিত্য উৎসব। দিল্লির প্রগতি ময়দানেও আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশের একুশে বইমেলাঃ

স্বত্বাধিকারী চিত্তরঞ্জন সাহা ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় তার প্রকাশনীর বই বিছিয়ে বসেন।মাত্র ৩২টি বই ছিল সেখানে। অন্য কোনো প্রকাশকও ছিলেন না। বইগুলো ছিল বাংলাদেশের শরণার্থী লেখকদের লেখা। সেবছর বাংলা একাডেমীও তাদের বইয়ে বিশেষ মূল্যছাড় দেয়। তখন থেকে শুরু করে ১৯৭৬ পর্যন্ত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বই নিয়ে বটতলায় বসেন চিত্তরঞ্জন সাহা। এরপর তাকে দেখে উৎসাহী হয়ে ধীরে ধীরে অন্যরাও এগিয়ে আসে। ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি এই মেলাকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি সরাসরি যুক্ত হয় মেলার সঙ্গে। তারপর থেকে প্রতিবছর আয়োজিত হয় বই মেলা।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা: ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো এবং সবচেয়ে বড় বইমেলা। পঞ্চদশ শতকে শুরু হয়েছিল এই মেলা। মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কারক ইয়োহানেস গুটেনবার্গের আবিষ্কৃত ছাপাখানার যন্ত্র বইয়ের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। নিজের ছাপাখানার যন্ত্রাংশ এবং ছাপানো বই বিক্রির জন্য ফ্রাঙ্কফুর্টে আসেন তিনি। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের স্থানীয় কিছু বই বিক্রেতাও বই বিক্রির জন্য বসতে থাকে। বই কিনতে বিভিন্ন যায়গা থেকে পড়ুয়ারা আসতে শুরু করে। এভাবেই জমে উঠে ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলা। ১৯৬৪ সাল থেকে এ মেলার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে। অক্টোবর মাসে মাত্র পাঁচ দিন চলে এই মেলা। নানা দেশের মানুষের সমাগম হয় মেলায়। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পরেই জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলা হলো লিপজিগ বইমেলা।

লন্ডন বইমেলা: লন্ডন বই মেলাকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বই মেলা বলা হয়ে থাকে। ১৯৭১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই মেলার আয়োজন করা হয় প্রতি বছর এপ্রিলে। প্রথম বছর লন্ডনের দ্য বার্নারস হোটেলের বেজমেন্টে একটি টেবিলের উপর একজন লাইব্রেরিয়ানের কয়েকটি বই প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হয় মেলা। প্রদর্শনীটির নাম ছিল দ্য স্পেশালিষ্ট পাবলিশার্স এক্সিবিশিন ফর লাইব্রেরিয়ানস। তবে ধীরে ধীরে অনেক প্রকাশক আগ্রহী হয়ে উঠে এবং বই মেলার পরিধি বাড়তে থাকে।

টোকিও আন্তর্জাতিক বইমেলা: জাপানের শহর টোকিওর বিগ সাইট কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় টোকিও আন্তর্জাতিক বইমেলা। ১৯৯৩ সাল থেকে জাপানে চলছে এই মেলা। পঁচিশটি দেশের প্রায় ষোল হাজার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় এ মেলায়।

এছাড়াও পৃথিবীর নানা প্রান্তে আয়োজন করা হয় নানা রকম বই উৎসবের। তার মধ্যে চীনের বেইজিং আন্তর্জাতিক বইমেলা, ইতালির বোলোগনা শিশু সাহিত্যের বইমেলা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বইমেলা, হংকং বইমেলা, ইতালির তুরিনের বইমেলা, স্কটল্যান্ডের উইগটন বইমেলা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের পিইএন ওয়ার্ল্ড ভয়েসেস ফেস্টিভাল, যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ডস বাই দ্য ওয়াটার ফেস্টিভাল, সিডনি রাইটার্স ফেস্টিভাল উল্লেখযোগ্য। সময়-সুযোগ করে ঘুরে আসতে পারেন এসব মেলা থেকে। দেখা পেয়ে যেতে পারেন অনেকের প্রিয় লেখকেরও।