আজ ২৩ এপ্রিল উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের জন্ম ও প্রয়াণ দিবস।অন্যদেশ পরিবারের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কিন্তু শেক্সপিয়ারের সাহিত্য আসলে দ্বি-ফলার মতো। ইংরেজরা তাঁকে সাম্রাজ্যবাদী উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করল, কিন্তু সমালোচক কপিলিয়া কানের মতে উপনিবেশিত লোকেরা তাঁর সাহিত্য থেকে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করার উপাদান খুঁজে পেল
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
ইংরেজ মহাকবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ার ১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল স্ট্রাটফোর্ড-আপন-আভন নামক একটি মফস্বল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর জন্মতারিখটা অনুমান নির্ভর। স্ট্রাটফোর্ড হলি ট্রিনিটি চার্চে ২৬ এপ্রিল তাঁর ব্যাপ্টিজম হয়, সে প্রমাণ নথিতে আছে। ইংল্যান্ডে তখন যে কোনো শিশু জন্মানোর তিনদিন পর তার ব্যাপ্টিজম বা আকিকা হতো। সে হিসেবে শেক্সপিয়ারের জন্মতারিখ ২৩ এপ্রিল ধরা হয়। এ জন্য এটা গুরত্বপূর্ণ যে শেক্সপিয়ার মারাও যান ২৩ এপ্রিল। সালটা ছিল ১৬১৬।
শেক্সপিয়ারের সময় ইংল্যান্ডের চার্চের ভাষা ছিল ল্যাটিন। সে জন্য শেক্সপিয়ারের জন্ম-নিবন্ধকৃত নাম ছিল গুলিমাস ফিলিয়াস জোহান্স শেক্সপিয়ার। অর্থাৎ, উইলিয়াম হলো জন শেক্সপিয়ারের ছেলে। শেক্সপিয়ারের মায়ের নাম ছিল মেরি আর্ডেন শেক্সপিয়ার। শেক্সপিয়ারের পিতামহ রিচার্ড শেক্সপিয়ার স্ট্রার্টফোর্ডের পাশের গ্রাম স্নিটারফিল্ডে বাস করতেন। তিনি রবার্ট আর্ডেন নামক জনৈক ধনী লোকের বাসায় ভাড়া থাকতেন। এ আর্ডেনের মেয়ে মেরি আর্ডেনকে বিয়ে করেন শেক্সপিয়ারের বাবা জন শেক্সপিয়ার। শেক্সপিয়ার, তাই, বাবার দিক থেকে সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে হলেও মায়ের দিক থেকে বনেদী পরিবারের ছিলেন। জন শেক্সপিয়ার মেরি আর্ডেনকে বিয়ে করার পর স্ট্রাটফোর্ড-আপন-আভনে বসতি গাড়েন।
জন ও মেরির চার ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে শেক্সপিয়ার ছিলেন তৃতীয় সন্তান ও প্রথম পুত্র। তখন ইংল্যান্ডে প্লেগ রোগে শিশু মারা যেত বেশি। শেক্সপিয়ারের চার ভাইবোন শিশুবয়সে মারা গেলেও বাকি চারজনের মধ্যে শেক্সপিয়ার সবচেয়ে বেশিদিন বেঁচেছিলেন। এডমান্ড নামে শেক্সপিয়ারের সবচেয়ে ছোট ভাই তাঁকে অনুসরণ করে অভিনয় জগতে ঢুকেছিলেন। কিন্তু ১৬০৭ সালে মাত্র আটাশ বছর বয়সে তিনি মারা যান। শেক্সপিয়ার তখন লন্ডনের বেশ ধনী লোকদের একজন। ভাইয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তিনি বিপুল ভোজের আয়োজন করেছিলেন।
শেক্সপিয়ারের বাবা জন এক রকমের উচ্চাকাঙ্খী লোক ছিলেন। তিনি দস্তানা বা গ্লাভস তৈরির ব্যবসা করতেন। চর্মরোগের চিকিৎসাও জানতেন তিনি। জায়গা-জমিনের দালালিও করতেন। অননুমোদিত সুদের ব্যবসাতেও ঢুকেছিলেন। রাজনীতিও করতেন, এবং এক পর্যায়ে ১৫৬৮ সালে স্ট্র্যাটফোর্ডের একজন অলডারম্যান বা পৌরজন নির্বাচিত হয়েছিলেন। এটি ছিল সম্মানের পদবী। তাঁর পদবী অনুযায়ী তিনি হাতের বুড়ো আঙ্গুলে একটি বড় আংটি পরতেন, যেটি সম্ভবত শিশু শেক্সপিয়ারের কল্পনাকে আকর্ষণ করেছিল। শেক্সপিয়ারের অতি হাস্যরসপূর্ণ কিন্তু ঐতিহাসিক নাটক রাজা ৪থ হেনরি-র প্রথম পর্বে ফলস্টাফকে যুবরাজ হাল (রাজা ৫ম হেনরি)-কে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, সে যখন ছোট ছিল তখন এত চিকন ছিল যে অনায়াসে সে অলডারম্যানের আংটির ভিতর দিয়ে গলে যেতে পারত।
শেক্সপিয়ারের বাবা প্রচুর ধার-দেনা করতেন, ফলে একবার দেউলিয়া হয়ে জেলও খেটেছিলেন। হ্যামলেট নাটকে পোলোনিয়াস পুত্র লেয়ারটিসকে উপদেশ দিচ্ছেন: ঋণদাতা বা ঋণগ্রহীতা কোনোটাই হয়ো না (“নাইদার আ বরোয়ার নর আ লেন্ডার বি”)। ইংল্যান্ড শেক্সপিয়ারের সময় রানি এলিজাবেথের অধীনে প্রটেস্টান্ট খ্রিস্টান রাজ্য বনে গেলেও অনেকে ছিল তখনো ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসী। শেক্সপিয়ারের বাবা গোপনে ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন, এবং শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট-সহ বহু নাটকে পিতৃচরিত্রে তাঁর বাবার ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসের ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। বাবার বৃদ্ধ বয়সে শেক্সপিয়ার তাঁর বহু আকাঙ্খিত পারিবারিক উপাধি (কোট অব আর্মস) এনে দিয়ে তাঁকে সন্তুষ্টি দিয়েছিলেন।
শেক্সপিয়ারের জন্মস্থান স্ট্রাটফোর্ড একটি সুন্দর নিসর্গ-শোভিত শহর ছিল। এটার বিশাল বিশাল মাঠ ছিল। চমৎকার আভন নদীটি এখন যেমন তখনো বয়ে যেত, আর রাজহংসীরা এর জলে সাঁতরাত। বেন জনসনের প্রশংসিত শিক্ষক উইলিয়াম কামডেন ১৫৭০ সালে স্ট্রাটফোর্ডকে বর্ণনা করেছেন সুন্দর একটি ছোট বাজার-শহর হিসেবে।
শেক্সপিয়ার শিশু বয়সে হয়ত “পেটি স্কুল” বা নিম্ন প্রাইমারি স্কুলে গেছিলেন। তারপর “দ্য কিংস নিউ স্কুল” নামক গ্রামার স্কুলে পড়ে থাকতে পারেন। শেক্সপিয়ারের আমলে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষাক্রম ছিল গ্রিক ও ল্যাটিনভাষা ভিত্তিক। শিশুদেরকে ব্যাকরণ শিক্ষা ও বাক্য নির্মানের ওপর প্রচুর পাঠ দেওয়া হতো। ল্যাটিনভাষা ছিল বাধ্যতামুলক। বস্তুত ওপরের শ্রেণীতে ইংরেজিতে কথা বলা নিষেধ ছিল। শেক্সপিয়ারের সময় সবচেয়ে পরিচিত পাঠ্যবই ছিল কবি উইলিয়াম লিলি রচিত গ্র্যামাটিকা ল্যাটিনা। আর সে সময়কার খুব নাম করা শিক্ষক, যিনি রানি এলিজাবেথকেও পড়িয়েছিলেন, রজার আসকাম একটি বই লিখেছিলেন যার মধ্যে ল্যাটিন টেক্সটের পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদ ছিল। শেক্সপিয়ারের সাহিত্য থেকে প্রমাণ পাওয়া তিনি ঈশপের গল্প, আপুলিয়সের গোল্ডেন এ্যাস, এবং ওভিদের মেটাফরসোসিস খুব ভালো রপ্ত করেছিলেন। ইংরেজি ব্যাকরণ নিয়ে তাঁর খুব ঘর্মাক্ত সময় গেছিল বোঝা যায়। মেরি ওয়াইভস অব উইনডসর নাটকে ওয়েলসের অধিবাসী স্যার হিউ ইভানস, উইলয়াম পেইজকে জিজ্ঞেস করছেন, “হোয়াট ইজ ইয়োর জেনিটিভ কেইস প্লুরাল, উইলিয়াম?”
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মতো শেক্সপিয়ারও স্কুলজীবনকে ভালোবাসতে পারেননি। এাজ ইউ লাইক ইট নাটকে তিনি একজন স্কুলগামী ছাত্রের বর্ণনা দিয়েছেন, যে ছেলেটি অনিচ্ছার সাথে শম্বুকগতিতে এগুচ্ছে স্কুলের দিকে: “ক্রিপিং লাইক স্নেইল/আনউয়িলিং টু স্কুল।”
আঠার বছর বয়সে ১৫৮২ সালের নভেম্বরে শেক্সপিয়ার বিয়ে করেন প্রতিবেশী গ্রাম শটারির নিবাসী, এবং তাঁর চেয়ে ছয় বছরের বড়, অ্যান হাথাওয়েকে। বিয়ের ছ’মাসের মধ্যে তাঁদের প্রথম কন্যা সুসানা জন্ম নেয়। এর তিন বছর পর অ্যানের জমজ বাচ্চা হয়। মেয়ে সুসানা ও জুডিথ অনেকদিন বাঁচেন, কিন্তু ছেলে হ্যামনেট (মতান্তরে হ্যামলেট) মাত্র ১১ বছর বয়সে মারা গেলে শেক্সপিয়ার বিরাট ধনসম্পদের মালিক হয়েও পুরুষ-উত্তরাধিকারীবিহীন হয়ে পড়েন। শেক্সপিয়ারের এ নিয়ে উদ্বেগ ছিল, তাই দেখা যায় ম্যাকবেথ নাটকে ম্যাকবেথ লেডি ম্যাকবেথকে বলছেন, ‘কেবল পুত্রসন্তানের জন্ম দাও’ (‘ব্রিং ফর্থ ম্যান-চিলড্রেন অনলি”)।
১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ পর্যন্ত এ সাত বছর শেক্সপিয়ারের জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। শেক্সপিয়ারের জীবনীকার ও গবেষকেরা এই ‘লস্ট ইয়ারস’ নিয়ে নানা তত্ত্ব বের করেছেন, তবে এখন সবচেয়ে বেশি যে ধারণাটা গুরুত্ব পাচ্ছে সেটি হচ্ছে ই. এ. জে হনিগম্যান প্রদত্ত এ তথ্যটি যে শেক্সপিয়ার ঐ সময়টুকুতে কোন ধনী লোকের গৃহে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।
তবে ১৫৯২ থেকে শেক্সপিয়ারের অস্তিত্ব লন্ডনে জানা হয় রবার্ট গ্রিন নামক এক প্রবীণ নাট্যকারের এক আক্রমণাত্মক প্যাম্ফলেট থেকে। তিনি বলছেন, ‘কে একজন আনকোরা লোক এসে কাক হয়ে (“আপস্টার্ট ক্রো”) ময়ূরের পুচ্ছ ধারণ করে পুরো লন্ডন শহরকে নাচাচ্ছে’। এ ‘নাচাচ্ছে’ বলতে যেয়ে তিনি “শেইক-সিন” শব্দটি ব্যবহার করেন, যার মধ্যে শেক্সপিয়ারের নামের অনুরণন পাওয়া যায়। গ্রিনের আক্রমণের কারণ হলো সে সময়কার অন্যান্য জনপ্রিয় নাট্যকারেরা যেমন টমাস কিড, ক্রিস্টোফার মার্লো প্রমুখ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী- যে জন্য তাঁদেরকে ‘ইউনিভার্সিটি উইট’ বলা হতো, কিন্তু শেক্সপিয়ারের সেরকম কিছু ছিল না, উপরন্তু তিনি ছিলেন মফঃস্বল থেকে আগত।
তাঁর বাল্যকালে প্রচুর ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল স্ট্রাটফোর্ডে প্রদর্শনীতে যেত। নাট্য উপভোগের সে অভিজ্ঞতা শেক্সপিয়ারের অভিনয় জীবনে কাজে আসল। শেক্সপিয়ার সম্ভবত প্রথমে ফিলিপ হেনসলোর অধীনে নাট্যজগতে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ফিলিপ হেনসলোর ডাইরি (হেনসলোস ডাইরি) এলিজাবেথিয় নাট্যজগত সম্পর্কে জানার জন্য একটি অন্যতম আকর গ্রন্থ। তিনি ছিলেন ১৫৮৭ সালে স্থাপিত দ্য রোজ থিয়েটারের মালিক। সম্ভবত খুবই প্রাথমিক অবস্থায় দ্য রোজ থিয়েটার হলে শেক্সপিয়ার যুক্ত ছিলেন। এ দলের শক্তিশালী নাট্যকার ছিলেন ক্রিস্টোফার মার্লো এবং অভিনেতা ছিলেন হেনসলোর জামাতা এডওয়ার্ড এলেইন। এর অল্পসময় পরে (১৫৯৪) শেক্সপিয়ার জেইমস বারবেজের অধীনে দ্য থিয়েটার (১৫৭৬ সালে স্থাপিত, লন্ডনের প্রথম উন্মুক্ত মঞ্চ) হলে অভিনয়কারী দল “লর্ড চেম্বারলেইনস মেন” দলে যোগ দেন, এবং বন্ধুত্ব হয় জেইমসের পুত্র রিচার্ড বারবেজের সঙ্গে যে কি না অসাধারণ অভিনেতা ছিলেন। হ্যামলেট যখন প্লেয়ার কিংকে বলেন যে হাত পা নাচানাচি করে অভিনয় করা চলবে না (“টিয়ারিং আ প্যাশন টু ট্যাটারস”), অভিনয় করতে হবে বাস্তবের অনুকরণে তখন আসলে শেক্সপিয়ার এলেইনের অভিনয় রীতির সমালোচনা করে বাববেজের অভিনয়কে প্রশংসা করছিলেন।শেক্সপিয়ারের নিজের লেখা এপিটাফে সাবধান করে দেওয়া আছে হাড় চোরেরা যেন তাঁর শবের হাড্ডি চুরি করতে সাহস না করে। তখন কফিন ভেঙে লাশ চুরি ইংল্যান্ডের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা ছিল
১৫৯৯ সালে শেক্সপিয়ারের নাট্যগোষ্ঠী টেইমস নদীর পাড়ে সাউথ ব্যাংক নামক জায়গাটিতে দ্য গ্লোব নামক একটি নতুন থিয়েটার হল প্রতিষ্ঠা করে, যদিও এর কাঠ এবং পাটাতন আসলে ছিল সম্প্রতি ভেঙে ফেলা দ্য থিয়েটারের পুরোনো কাঠ। শেক্সপিযারসহ বারোজন অভিনেতা ও নাট্যকার এর মালিক হন। নাট্যমঞ্চ হিসেবে দ্য গ্লোব অনন্য বৈশিষ্ট্য দ্বারা ঋদ্ধ ছিল। কিন্তু এর কোনো ধবংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। তবে হেনরি ফিফথ-সহ বহু নাটকে শেক্সপিয়ার গ্লোবের পাটাতন মঞ্চের অসরাসরি উল্লেখ করেছেন।
১৬০৩ সালে রানি এলিজাবেথ মারা গেলে পরবর্তী রাজা জেইমস দ্য ফার্স্ট শেক্সপিয়ারের দলটিকে রাজার একান্ত দল হিসেবে গ্রহণ করেন, এবং দলটির নাম পরিবর্তিত হলো ‘দ্য কিংস মেন’ হিসেবে।
শেক্সপিয়ার মোট ৩৮ টি নাটক, ২ টি লম্বা কবিতা ও অন্যান্য কিছু কবিতাসহ ১৫৪ টি সনেট লিখেছিলেন। একটা সনেটে রাত জেগে জেগে মোমবাতির আলোয় পরিশ্রম করে লেখালেখির কথা আছে।
শেক্সপিয়ারের শেষ রচিত নাটক দ্য টেম্পেস্ট, ১৬১১ সালে। এরপর শেক্সপিয়ার লন্ডন ছেড়ে স্ট্রাটফোর্ডে গিয়ে বসবাস করেন, এবং পেটের অসুখে মারা যান। তাঁর উইলে স্ত্রীকে ‘সেকন্ড বেস্ট বেড’ দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলে, গবেষকেরা এর কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেন না ভেবে এমন হলো কেনো। শেক্সপিয়ারের নিজের লেখা এপিটাফে সাবধান করে দেওয়া আছে হাড় চোরেরা যেন তাঁর শবের হাড্ডি চুরি করতে সাহস না করে। তখন কফিন ভেঙে লাশ চুরি ইংল্যান্ডের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা ছিল।
১৬২৩ সালে শেক্সপিয়ারের প্রথম সমগ্র সংগ্রহ (ফোলিও এডিশন) বের হলে মুখবন্ধনী কবিতাতে তাঁর সতীর্থ বেন জনসন লিখেন, শেক্সপিয়ার শুধু তাঁর নিজের সময়ের কবি নন, তিনি সর্বকালের কবি: “হি ওয়াজ নট অফ অ্যান এইজ, বাট ফর অল টাইম।”
এ বিশ্বাসে ইংরেজরা যখন ভারতবর্ষ শাসনে নামে তারা শেক্সপিয়ারের সাহিত্যকে সামনে রাখে। আসলে তারা শেক্সপিয়ারকে তাদের সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য পূরণের জন্য ব্যবহার করতে থাকে। কিন্তু শেক্সপিয়ারের সাহিত্য আসলে দ্বি-ফলার মতো। ইংরেজরা তাঁকে সাম্রাজ্যবাদী উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করল, কিন্তু সমালোচক কপিলিয়া কানের মতে উপনিবেশিত লোকেরা তাঁর সাহিত্য থেকে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করার উপাদান খুঁজে পেল।
আজকে তাই শেক্সপিয়ার পাঠ মানে হচ্ছে কোনো একক অনৈতিহাসিক শুদ্ধ মানবতার পাঠ নয়, তাঁর পাঠ মানে হচ্ছে ঐতিহাসিক চেতনা সমৃদ্ধ বহুমাত্রিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য-সমৃদ্ধ পাঠ।