বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

কটন কলেজ, পর্ব -১২

।।বারো।।

কলেজে যাবার পথে কুড়িটাকার মানি অর্ডারটা পেলাম।টাকাটার খুবই দরকার হয়ে পড়েছিল।অজিত থেকে ধার নেওয়া দশ টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে।দুটো প্র্যাক্টিকেল নোট বুক কিনতে হবে,তার জন্য পাঁচ টাকা খরচ হবে।এই পয়সা দিয়ে কালি কিনব না।জুতোর অবস্থাও খুব খারাপ,হাফসোল করাতে হবে।বাটাতে দিলে অনেক খরচ পড়ে যাবে,অনেক টাকা লাগবে। হোস্টেলে প্রতিদিন আসা মুচিটিকে দিয়ে করাতে হবে,দুটাকা দিলেই হয়ে যাবে বোধহয়।দেখতে দেখতে খরচ সতেরো টাকায় দাঁড়াল,বাকি থাকবে তিন টাকা।তিন টাকায় কী করব?আজ একটা সিনেমা দেখব,অনেক দিন সিনেমা দেখিনি।না,না এক দিস্তা কাগজ কেনা যেতে পারে,কাগজ অন্য কারও কাছ থেকে আনা যাবে না,কাগজ শেষ হয়েছে। পানবাজার থেকে কিনলে আট আনাতেই পেয়ে যাব,হোস্টেলের পাশের দোকানে দাম বেশি। ও হো,টুথপেস্ট ও নেই,ছোট দেখে একটা কিনতে হবে,দেড় টাকা নেবে।ঘুম থেকে উঠেই কারও কাছে পেস্ট চাওয়া যায় না।এটাও কিনতে হবে।

যাঃ উনিশ টাকা দেখি খরচ হয়ে গেল।হাতে এক টাকা রইল।এক টাকা দিয়ে কাটানো মুশকিল,আবার কবে পয়সা আসবে কে জানে?কোনো খরচটা বাদ দেওয়া যেতে পারে কি?না,সম্ভব নয়।অজিতকে দশ টাকা না দিলেও হবে অবশ্য,না না,সে হঠাৎ চেয়ে বসলে বড় লজ্জার কথা হবে।

এইসব নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে কলেজে পৌছে গেছি বুঝতেই পারিনি।প্রথম দুটি পিরিয়ডে কেমেস্ট্রির প্র্যাক্টিকেল রয়েছে।দ্রুত ল্যাবরেটারিতে ঢুকে গেলাম।একটু তাড়াতাড়ি করতে হবে,সল্টটা বেশ শক্ত।গতকাল অ্যাকোয়া রেজিয়া ছাড়া কোথাও ডিজলভড করতে পারলাম না।ফসফেটের ও ইণ্ডিকেশন দিয়েছে,সেটাও সেপারেট করতে হবে।

দেড় ঘণ্টা সময় লড়াই করে করে অবশেষে চারটে র‍্যাডিকেল সেপারেট করলাম।বিকার এবং ফানেল ইত্যাদি ফিরিয়ে দিয়ে হাত ধুয়ে রুমালে হাত মুছে ল্যাবরেটারি থেকে বেরোতে যেতেই রমেশ নামের বেয়ারাটা একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,আজ এনেছেন কি?তার কথায় আমি চমকে উঠলাম।বেশ কয়েকদিন ধরে দেব দেব বলে ফাঁকি দিয়ে আসছি।হাতে না থাকলে কী করতে পারি।কী মনে হল জানি না।পকেট থেকে একটা টাকা বের করে রমেশের হাতে দিয়ে তার হাতের কাগজটা এনে আমার নামটা খসখস করে লিখে ফেললাম।নামটা লিখতে গিয়ে দেখলাম আমার ওপরে থাকা নামগুলির একজন ও পয়সা দেয়নি,আট আনাই বেশি।হঠাৎ আমি বিরাট একটা ভুল করার মতো থেমে গেলাম।না,দেবার পরে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। কাগজটা ফিরিয়ে দিয়ে আমি বেরিয়ে এলাম,রমেশের ঠোঁটের ফাঁকে একটা প্রফুল্ল হাসি দেখতে পেলাম।

আচ্ছা,অনেক ধনী ঘরের ছেলেরা তো আছে,তারা অন্তত এক টাকা করে তো দিতে পারত।এমনিতে দেখছি প্রচুর পয়সা খরচ করে।দৈনিক এক প্যাকেট পানামা লাগে বলে অরবিন্দ বলেছিল,তারপরে পান-সুপুরি তো আছেই। তারমানে ওদের দৈনিক চার পাঁচ টাকা খরচ লাগেই।এত বাইরের খরচ থাকতে দৈনিক দান দক্ষিণার পয়সা কোথা থেকে দেবে?

পরীক্ষার সময় একেক জন বেয়ারাকে একটা র‍্যাডিকেলের জন্য চার পাঁচ টাকা দিতে দেখেছি।এমনিতে যদি কোনো বেয়ারা পান খাওয়ার জন্য চার আনা চায়,আদর করে আটআনা দেওয়া অনেক ছেলে আছে।কিন্তু তাদের কেউ তো আমার মতো এক টাকা দেয়নি।আমাদের ক্লাসে তো দুশোর বেশি ছেলে আছে,কোথায় ওদের মধ্যে মাত্র কুড়িটা নাম কাগজে দেখলাম।এখন আর কী বলে দেবে,হরমোহন তো আর আমাদের কলেজে কাজ করে না।বেশ ভালো বেয়ারা ছিল।আমরা কয়েকদিনের জন্য পেয়েছি।তারপর টিবি হওয়ার জন্য তার কাজ চলে গেল।এখন কোথায় আছে জানি না।রমেশের দেওয়া কাগজটায় লেখা আছে,চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে।সেইজন্য একসঙ্গে কাজ করা সহকর্মীরা একত্রিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রী,অধ্যাপকদের কাছ থেকে পয়সা তুলছে।কয়েকজন দিয়েছে,প্রায়ই দেয়নি। হয়তো দুশো টাকা উঠবে।হরমোহনের কাছে সেই টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দুই হাজার ছাত্র ছাত্রীর কলেজ থেকে সে হয়তো মাত্র দুশো টাকা পাবে।ছেড়ে আসা কলেজের এটা ভালোবাসা না করুণা বলতে পারি না,তাঁর অভাবগ্রস্ত পরিবারটা হয়তো দুদিনের জন্য একটু শান্তি পাবে।তারপর একদিন তাঁর মৃত্যু হবে,সেই মরার খবর কতজন পাবে জানি না। প্রাণচঞ্চল কটন কলেজের কাছে এটা কোনো খবরই নয়।

আচ্ছা সরকার কি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারে না?কীভাবে করবে,সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটারির এসিডের ধোঁয়ার মধ্যে থাকা এইসব মানুষ,এদের নিশ্বাসের সঙ্গে মুক্তবায়ু কোনোদিনই প্রবেশ করেনি,হাইড্রোজেন সালফাইড,কার্বন মন অক্সাইড বিভিন্ন ধোঁয়া খেয়ে বছরের পর বছর পার করেছে,তাই এদের টিবি হওয়াটা খুব একটা বড় কথা নয়।এই সমস্ত মানুষের জন্য সরকার কি করবে,কিছুই করতে পারবে না,করার মতো কাজ সরকারের অনেক আছে।পরীক্ষার আগে যে হরমোহনকে একটা রেডিকেল করে দেবার জন্য চার-পাঁচ টাকা দিয়েছিল,সেই হরমোহনকে সেই একই ছেলেরা আজ আট আন পয়সা দিতেও অসুবিধা বোধ করে,কারণ এখন দিলে আর কোনো লাভ নেই।সরকার এই ধরনের মানুষের দ্বারাই তৈরি। এরাই তো দেশের ভবিষ্যৎ।

এই ধরনের অসংলগ্ন কথা ভেবে ভেবে কখন যে এডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিংয়ের কাছে চলে এসেছি বলতেই পারিনা।মাঝখানের দুটো পিরিয়ড অফ,কী করব ভাবছি।চা খাওয়ার পয়সা নেই,ক্যান্টিনে বসে দুটো পিরিয়ড কাটিয়ে দিতে পারতাম।বাকি থাকা উনিশ টাকা একেবারে হিসেবের পয়সা,খরচ করা যাবে না। হঠাৎ দেখি কিছু ছেলে প্রিন্সিপালের ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে।মুখগুলি অপরিচিত।ছেলেগুলির প্রত্যেকেই উত্তেজিত।নিজেদের মধ্যে কী কথা বলছে বুঝতে পারলাম না।তার মধ্যে অবিনাশকে ও দেখতে পেলাম।ওকে জানি,গত বছর আমাদের সঙ্গে পড়েছিল,বাড়ির অবস্থা ভালো না হওয়ায় একটা চাকরির ব্যবস্থা করে এই বছর নাইট সেকশনে ট্রান্সফার নিয়ে দিনের বেলা চাকরি করছে। হঠাৎ অনেকদিন পরে অবিনাশকে দেখে আমি চিৎকার করে উঠলাম—

‘কী খবর তালুকদার,অনেকদিন পরে যে?’

‘প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম।’

‘কেন? আপনি তো দিনের বেলা চাকরি করেন তাই না?’

‘অফিস থেকে পালিয়ে এসেছি।আমাদের দুঃখের কথা আর কী বলব,সে দিনকাল আর নেই।’শেষের কথাটা বেশ দুঃখের সঙ্গে বলল।

‘মানে?’

‘একটা ডেপুটেশন নিয়ে এসেছিলাম,আগে দিনে এখানে পড়েছিলাম বলে আমাকেই লিড দিতে হচ্ছে।’

‘ডেপুটেশন?’আমি কিছুটা অবাক হয়ে অবিনাশকে জিজ্ঞেস করলাম।

‘মানে কোনো ইউনিয়ন,ক্লাব,সোসাইটি অথবা অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নয়,সেলফ মেড ডেপুটি।আজ প্রায় পনেরো দিন কলেজে লাইট নেই,সেইজন্য বুঝতেই পারছেন আমার অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে?কলেজে এসে গোধূলির পানবাজারের মানুষ দেখে পকেটের পয়সাগুলি ‘কল্যাণী’ বা ‘গুয়াহাটি ডায়েরি’কে দিয়ে ফিরে যাই,আমাদের জন্য লাইব্রেরি,কমন রুম খোলা থাকে না।‘রেডিও’ফনিক্স গানগুলি শোনায় বলে রক্ষা…’

কথাগুলি ব্যঙ্গ করে বলল যদিও চাকরি থেকে পালিয়ে এসে রাতে লাইটের কথা বলতে আসা অবিনাশের চোখে ব্যর্থতার জড়তা।

‘এই কথা বলার জন্য অফিস থেকে পালিয়ে আসার কী দরকার ছিল?’

না এসে কী করব,রাতে তো প্রিন্সিপাল কলেজে আসেন না,প্রফেসর এলেও আমাদের মতো ব্যবস্থা হয়,ফলে আজ এতদিন ধরে এটা নো বডি বিজনেস হয়েই আছে।

‘কেন প্রিন্সিপাল রাতের জন্য বুঝি…’

আমার কথা শেষ হল না,অবিনাশ বলে উঠল,‘পায়,পায় অবশ্য বেতন নয়,অ্যালাউয়েন্স,নতুন পে স্কেল হলে অবশ্য অ্যালাউয়েন্সটা মার্জ হয়ে যাবে বলে শুনেছি…’

কথা বলতে বলতে অবিনাশ তালুকদার এবং তাঁর সঙ্গীরা সরে গেল।নতুন পে স্কেল,অ্যালাউয়েন্স এইসব আমি বুঝি না,অবিনাশ চাকরি করছে বলে জানে।সেসব সম্পর্কে বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস না করে আমি হোস্টেলের দিকে এগিয়ে চললাম,কারণ মাঝখানে দুটি পিরিয়ড অফ আছে।

অবিনাশ চলে গেল।সে অফিস থেকে পালিয়ে এসেছে।অপেক্ষা করার মতো সময় নেই।ধরা পড়লে চাকরিও যেতে পারে।না হলে একটা ওয়ার্নিং পাবে।হয়তো এক্সপ্লেনেশন দিতে হবে।

কয়েকটি না জ্বলা লাইট জ্বালাতে এসেছে,দিনটা অফিসে খেটে খেটে তার মধ্যে অল্প সময় বের করে।অবিনাশরা কলেজে আসে জীবনের আশার আলো জ্বালানোর জন্য,সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে।কিন্তু এই ধরনের ছেলেদের লাইট না থাকার জন্য সন্ধ্যের পর সন্ধ্যে এমনিতেই পার করতে হচ্ছে।তাদের জন্য কেউ ভাবে না।অফিস থেকে পালিয়ে এসে প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করে লাইটের কথা বলতে হয়েছে।

নৈশ শাখার জন্য অধ্যাপকরা পয়সা পায় কিন্তু বেয়ারারা পয়সা পায় কি না কে জানে?

পেয়েছে,পেয়েছে।রমেশ বলেছিল রাতে কাজ করার জন্য পয়সা বেশি দিয়েছে।

হঠাৎ আমার একটা পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল। পুরোনো মানে বেশি দিনের নয়।গত নভেম্বর না ডিসেম্বর মাসের কথা।সেদিন পুরোনো ইউনিয়ন বডি থেকে নতুন ইউনিয়ন বডি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যভার গ্রহণ করেছিল।সেই অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমিও গিয়েছিলাম।সন্ধ্যেবেলা ইউনিয়ন হলে জাঁকজমক ভাবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়েছিল।

আমার পাশে দুটো ছেলে বসেছিল,প্রত্যেকের হাতে বই খাতা।আমি সেজন্য অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়েছিলাম।সবাই আমার অপরিচিত।সেইজন্য নৈশ শাখার বলেই ধরে নিয়েছিলাম।তা নাহলে সন্ধ্যে ছয়টার সময় বই খাতা নিয়ে কে কলেজে আসবে?

হঠাৎ তাদের মাঝখান থেকে কেউ একজন বলছে শুনেছিলাম,আজ তো একেবারে অষ্টম আশ্চর্য কারবার দেখছি,নাইট সেকশনের বন্ধের নোটিশ আগেই পেয়ে গেলাম,অন্যসময় তো ডিপার্টমেন্টে আলো জ্বলছে না বলে কলেজ বন্ধ ভেবে নিয়ে ফিরে যেতে হয়,নোটিশ থাকে না।

অন্য একজন হেসে জিজ্ঞেস করল,নোটিশ কি আর তোর জন্য দিয়েছিস বলে ভেবেছিস?

‘তাহলে কেন দিয়েছে?’ছেলেটি আগ্রহের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল।

‘তুই তো জানিস না,আজ থেকে বেয়ারারা রাতে কাজ করবে না বলে স্ট্রাইক করেছে,তার জন্য এই ক্লাস ক্যান্সেলের নোটিশ,যাতে অন্যেরা কেউ জানতে না পারে-অন্যজন হেসে বলল।

‘আরে আজকেই জানতে পারলাম,অন্য একজন বলল।স্ট্রাইক হলে তো কালকেও হবে,তখন তো সবাই জানতে পারবে,কালতো কিছুই নেই।

‘এক রাতে অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে’প্রথমজন বিজ্ঞের মতো বলল,একটা রাত ছাত্ররা পেপারের রিপোর্টারদের অগোচরে রাখতে পারলেই কাল সবকিছু হয়ে যাবে।’

সেদিন আমি কথাটায় খুব একটা গুরুত্ব দিইনি।প্রাণচঞ্চল কটন কলেজে কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি।

কিন্তু ‘এক রাতে অনেক কিছু হতে পারে’-সেদিন ছেলেটি সত্যি কথাই বলেছিল।পরের দিন কৌতূহলবশত রমেশকে জিজ্ঞেস করায় রমেশ বলেছিল-মাসের পর মাস রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করেও বেয়ারারা বেশি পয়শা পাচ্ছিল না। সকাল নয়টা থেকে চারটে পর্যন্ত কাজ করে যে পয়শা পেত,সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করেও একই টাকা পেত।কিন্তু অধ্যক্ষ,অধ্যাপকরা রাতে কাজ করার জন্য বেশি পয়শা পেত।

বারবার দাবি জানিয়েও যখন লাল ফিতার পাক খুলে তাঁদের প্রাপ্য মজুরি পাওয়ার আশা দেখা গেল না তখন তারা রাতে কাজ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল।এই সিদ্ধান্ত শুনে অধ্যক্ষ শিলঙে খবর পাঠাল,সঙ্গে সঙ্গে এক রাতের মধ্যে তাঁদের দাবী পূরণ হয়ে গেল।

সরকারের মান রাখার জন্য প্রথম রাতে নতুন ইউনিয়ন বডির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অধ্যক্ষই আরম্ভ করলেন।হয়তো অধ্যক্ষ কর্ম তৎপরতার জন্য সরকার থেকে বাহবা পেলেন।

বেয়ারাদের সবল ন্যায্য দাবী ব্যর্থ হয়ে গেল।

এই খবর কেঊ পেল না।এই খবর কটন কলেজের ইতিহাসে স্থান পেল না। এসব কটন কলেজের খবর নয়।মৃত্যুর দিকে তিলতিল করে এগিয়ে যাওয়া,অনাহারে অনিদ্রায় কাটানো হরমোহনের কথা কেউ জানে না।

অফিস থেকে পালিয়ে এসে রাতের লাইটের কথা বলতে আসা অবিনাশ তালুকদারের কথা কে জান?সেও জানে না আজ রাতে লাইট জ্বলবে কি জ্বলবে না,যেমন জানে না জীবনের আশা আকাঙ্খাগুলি একদিন তাঁর জ্বলে উঠবে কিনা।

সিলভার জুবিলি,গোল্ডেন জুবিলি,ডায়ামণ্ড জুবিলি,প্লেটিনাম জুবিলি অনেক জুবিলি কটন কলেজের ওপর দিয়ে পার হয়ে গেছে,অনেক পার হয়ে যাবে।সুন্দর সুন্দর স্মারক গ্রন্থ বের হবে,হাজার হাজার টাকা খরচ করে গৌরবময় অতীতের কথা সবাই স্মরণ করবে।তার মধ্যে উচ্ছিষ্ট ভাতগুলির কথা,ফেলে দেওয়া ভাতের খোঁজে ব্যর্থ হওয়া বিমলের কথা কেউ একবারও ভাবার সময় পাবে না।

তিলতিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া যক্ষ্নারোগী হরমোহনের কথা সবাই ভুলে যাবে।অফিস থেকে পালিয়ে পনেরো দিন লাইটের অভাবে ক্লাস না হওয়ার কথা বলতে আসা অবিনাশ তালুকদারের কথা কেউ মনে রাখবে না।

সমস্ত কিছু হারিয়ে যাবে।বিমল হারিয়ে গেছে,হরমোহন হারিয়ে গেছে,অবিনাশ ও হারিয়ে যাবে,হয়তো আমিও হারিয়ে যাব।

নতুন নতুন ছেলে আসবে,নতুন মেয়ে আসবে,নতুন নতুন অধ্যাপক আসবে।

একে একে পার হয়ে যাবে সিলভার,গোল্ডেন,ডায়মণ্ড,প্লেটিনাম জুবিলি।

ভুলে যাওয়াই আজকের পৃথিবীর বর্তমান।হারিয়ে যাওয়াই আজকের পৃথিবীর লক্ষ্য।এর মধ্যে কারও অস্তিত্ব নেই।

আমরা যে সব হারিয়ে যাওয়া অতীত।


চলবে ...