মঙ্গলবার, মার্চ ১৯, ২০২৪

কটন কলেজ, অন্তিম পর্ব

।।ষোলো।।


রমেনের দিয়ে যাওয়া রসিদটা আবার খুলে দেখলাম।তার ওপরে লিখে দেওয়া লাল অক্ষরগুলি দেখে আমি আবার বন্ধ করে রাখলাম।বন্ধুবান্ধব যে যেখানে শুনতে পেল একবার খবর করার জন্য এল।ধীরে ধীরে ছেলেদের আসা বন্ধ হল।রুমমেটরা যদিও এখনও ঘুমোয়নি বিছানায় পড়ে আছে।ওদের নিস্তব্ধ মুখগুলি দেখে এরকম মনে হচ্ছে যেন সবাই বোবা,কথা বলতে পারে না।আমার রুমমেট,আমার বন্ধুবান্ধবের অন্তরে একটা অপ্রীতিক্র,অপ্রত্যাশিত আশ্চর্যজনক দুর্ঘটনা হিসেবে যদিও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া করেছে,আমরা তা সাধারণভাবেই গ্রহণ করেছি।বন্ধ থেকে ফিরে আসার পরেই আমি কেবল একটা কথাই ভাবছিলাম,যদি আমি পাশ করি তাহলে কী করব?’এই কথাটা বন্ধে আমি বাড়িতে বসে অনেক ভেবেও কোনো উত্তর পাইনি।বিহুর ঠিক আগেই ওরিয়েন্টাল কনফারেন্স হওয়ায় কলেজ অনেকদিন হয় বন্ধ।বন্ধে বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু
হোস্টেলগুলি কনফারেন্সের জন্য খালি করে দিতে হওয়ায় বাড়িতে যেতে বাধ্য হলাম। একমাস পরে যখন বাড়ি থেকে এসে হোস্টেলে পৌছেছি হোস্টেলের প্রতিটি রুমেই নীরবতা বিরাজ করছিল।একেবারে যাকে বলে পিনড্রপ সাইলেন্স।শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে এসেছে যদিও কেউ একটু বিশ্রাম নেবার,একমাসের জমিয়ে রাখা কথা বলার সময় নেই।সবাই ব্যস্ত নিজের পড়াশোনা নিয়ে,নিস্তব্ধ পরিবেশটার দিকে যখনই তাকাই,তখন সমস্ত উৎসাহ হারিয়ে ফেলে নিজেকে প্রশ্ন করি,আমি যদি পাশ করি কী করব? আমি আর এরপরে পড়তে পারি না।পড়ার বই বন্ধ করে কাগজ-পেন্সিল নিয়ে হিসেব করতে শুরু করে দিই।বারো টাকা করে বারো মাসের ফীস একশো চুয়াল্লিশ টাকা।তার সঙ্গে মিসেসেলিনিয়াস বাইশ টাকা,মোট একশো চৌষট্টি টাকা,তারপরে সিটরেন্ট,এই মাসের মেস ডিউজ এবংএবংআমি আর ভাবতে পারিনা। তারপরে পাশ করলে তো পরীক্ষার ফীস আছেই।আচ্ছা সেটা তো পরের কথা,কিন্তু টেস্টে পাশ করার ফলটা হাতে পাওয়ার জন্য দুশো টাকা দরকার। মাঝে মধ্যে হঠাৎ ভাবি পরীক্ষা দেব না।কিন্তু ছেলেগুলি জিজ্ঞেস করলে কী জবাব দেব? প্রিপারেশন হয়নি,এবার ড্রপ দিলাম।সঙ্গে সঙ্গে কেউ একজন হয়তো আমার হয়ে একটা মেডিকেল সার্টিফিকেট এনে প্রিন্সিপালকে দেব।পরীক্ষা দিয়ে যদিও ফেল করার সম্ভাবনা থাকে,এর পরে আর ফেল করার প্রশ্ন উঠে না।আগের রেকর্ড দেখে টেস্টে পাশ করিয়ে দেবে।
পরীক্ষার দুদিন আগে পরিমল কিছু একটা দেখার জন্য খান্নার ‘ক্যালকুলাশ’এর খোঁজে এসেছিল।কিছু একটা ভেবে বলে ফেললাম ‘খান্নার চারটে নোট আমি বিক্রিকরে দিতে চাই।
‘কেন?’
‘খান্নার নোট আর কী পড়ব,একেবারে রাবিশ।তারচেয়ে মেইন বুক ভালো।’কথাটা এতগভীরভাবে বললাম যাতে আমার ফাঁকিটা ধরতে না পারে।আমার কথা শুনে পরিমল বলল—এইসব বই বিপদে আমাদের সাহায্য করে,পরীক্ষার সামনে এখন আর অঙ্কের সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো সাহস আর আমার নেই,দামটা একটু কম করলে নিতে পারি।’
দশ বারো টাকা দামের টেক্সট বুক কিনতে না পেরে চার-পাঁচ টাকা দামের খান্নার ম্যাথামেটিক্সের চারটা নোট কিনেছিলাম,সেটাই দশ টাকায় পরিমলকে দিয়ে দিলাম।দেবার সময় চোখের জল বেরিয়ে আসতে চাইছিল যদিও সেই ভাব ঢেকে রেখে আমি বললাম –টেক্সটবুক থাকায় এগুলি এমনিতে পড়েছিল,কেউ কেউ ভালো বলায় মিছামিছি কিনলাম।’
এক এক করে পরীক্ষা পার হয়ে গিয়েছিল।কখন ও কখন ও পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় আমার হাত থেমে যাছিল,পুনরায় সেই চিন্তা আমাকে ঘিরে ধ্রছিল।আমি যদি পাশ করি কী হবে?এভাবে কতক্ষণ পার হয়ে যায় বলতে পারি না।সেকেণ্ড,মিনিট,ঘন্টা হিসেবে তিন ঘণ্টা পার হয়ে যায়।ইনভিজিলেটর পরীক্ষার খাতাগুলি এক এক করে নিয়ে যায়।কী পরীক্ষা দিলাম আমি নিজেই জানি না।রমেনদের উৎপাতের ভয়ে বসে রিলাম।আমি জানতাম পরীক্ষার রেজাল্ট কী হবে,কিন্তু ওরা শুনে না।ওদের একটাই কথা কটনে কেউ টেস্টে ফেল করে না।
বাড়ি থেকে ফেরার সময় মা কেবল ৭৫ টাকা দিয়ে আমাকে বলেছিল,’আর কিছুই দিতে পারলাম না,ভালোভাবে পরীক্ষা দিবি,কিছু দরকার হলে লিখবি,না খেয়ে হলেওপাঠাব…’।
আর কিছু দরকার?আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।আমার চোখের জল দুগাল বেয়ে নেমে আসছিল।
হঠাৎ দুদিন আগের মায়ের কথাটা মনে পড়েছিলঃ
সেদিন মা ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছিল।মানুষ মরলে যেভাবে কাঁদে,ঠিক সেভাবে।অবশ্য সেদিন কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি,আমাদের বগী নামে গরুটার মৃত্যু হয়েছিল।গরুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এভাবে কাঁদার কথা শুনলে এখানকার সবাই হাসাহাসি করবে,বলবে বাজে সেন্টিমেন্ট।আমি কিন্তু মাকে সেদিন কোনো সান্ত্বনা দিতে পারিনি।কারণ গাভীটার মৃত্যু মানেই আমার পাঠানো টাকা থেকে আরও পনেরো টাকা কমে যাওয়া,গাভীটার দুধ বিক্রি করেই আমার জন্য মা পনেরো টাকা রোজগার করত। উপার্জনের একটা রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। নতুন করে একটা গাভী কেনার মতো
মা-বাবার সামর্থ্য নেই।আমার জন্য সেই পনেরো টাকা উপার্জন করার জন্য মা-বাবাকেদুই ঘণ্টা কম ঘুমোতে হবে,রাতের বেলাতেও মাকে ল্যাম্প জ্বালিয়ে কাপড় বুনতে হবে। বন্ধের মধ্যে বড় সোনাকাকুর ওখানে গিয়েছিলাম।আসার সময় পাঁচ টাকা দিয়েছিল।গত বন্ধের পরে হোস্টেলে এসে এবার কেবল দশ টাকাই বড় সোনাকাকুর কাছ থেকে পেয়েছি।কারণ আমি গত পনেরো তারিখ হোস্টেলে এসেছি।মাসে ত্রিশ টাকা হলে
পনেরো দিনে পনেরো টাকা হয়,একেবারে হিসেব করে দিয়েছে। একবার ভাবলাম বড় সোনাকাকুকে লিখব নাকি?কিন্তু কোন সাহসে লিখব?যে মানুষটি দিন হিসেবে হিসেব করে পয়সা পাঠিয়ে কর্তব্য পালন করে সেরকম একজন মানুষের কাছে একশো দুশো টাকা চাওয়ার যুক্তি কোথায়?তাছাড়া লিখলেই বা কি হবে তিনি হয়তো বলবেন,গুয়াহাটিতে পড়তে যেতে কে বলেছিল? আমার জন্য ত্রিশ টাকা দিয়েছে সেটাই যথেষ্ট।আমার জন্য পয়সা করে তার কী লাভ হবে?একদিন বাবাও তো বাড়ির সবাইকে নিজের বলে আঁকড়ে ধরেছিল,কিন্তু কার কাছ থেকে কী পেলেন?
বাবাকে দেখলে এখন পরিবারের সমস্ত সদস্যরা লজ্জা পায়,অপমান বোধ করে,দরিদ্রতাকে নিয়ে কেবল উপহাস করে।
বাবা যে ভুল করেছে সেই একই ভুল বড় সোনাকাকুর করার যুক্তি কোথায়?
বাবা যদি একদিন ভাবতেন পারতেন আমার জন্য একটা ঘর রাখা আছে,আমার সন্তান আছে,তাহলে কি আজ আমার এই অবস্থা হত?
ভবিষ্যতে যদি দেখে আমার দ্বারা কিছু উপকার হয়েছে তখন নিশ্চয় সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে,কিন্তু এখন কোন সাহসে এভাবে জুয়ো খেলবে? ভবিষ্যতে আমি কী করব সেই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। স্নেহ-ভালোবাসা এসবই আজকের যুগে
অচল,মানুষের প্রয়োজন কেবল স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। স্নেহ মমতা,দায়িত্ব সব কিছুতেই আজকের যুগে স্বার্থের পেছনে দৌড়ায়।
তাই কাকাদের আমি দোষ দিতে পারি না।ঠিক নেই ভবিষ্যতে আমিও হয়তো ঠকাতে পারি।তাছাড়া এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা ও বটে।
কিন্তু আমার দুঃখ হল যখন আকস্মিকভাবে বুন পিসি এবং প্রফুল্ল মামার কাছ থেকে টাকা এল।আমি গতকাল মানিঅর্ডার দুটো পেয়ে হাসতে পারছিলাম না,আমি কেবল কেঁদেছিলাম।আমি তো ভাবিনি এভাবেও আমার কাছে টাকা আসবে,আমি যদি আগে জানতাম। টাকাগুলি নিয়ে আমি কেবল কাঁদছিলাম।আমি জানি এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে,এখন আর আমি রেজাল্ট পাল্টাতে পারব না।রেজাল্ট কাল দিয়েছে।ফীস না দেওয়ার জন্য উইথহেল্ড ছিল।বুন পিসি আর প্রফুল্ল মামার কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে রমেন দুপুরবেলা আমার রেজাল্ট নিয়ে এল।রেজাল্ট দেখে সবাই অবাক,সবাই বিমূঢ়,সবাই দুঃখিত।কিন্তু আমি অবাক হইনি,দুঃখ করিনি,একটা স্বাভাবিক সত্যের মতোই আমি ১৬৬ টাকার ক্লিয়ারেন্স রশিদটার ওপরে ‘নট প্রমোটেড’বলে লিখে দেওয়া অক্ষরগুলি গ্রহণ করেছি। রমেনরা নিস্তব্ধ হয়ে নিজের নিজের বিছানায় পড়ে আছে।আমার সঙ্গে ওরাও পাশ করার আনন্দটা উপভোগ করতে পারছে না।ধীরে ধীরে হোস্টেলটা রাতের নিস্তব্ধতায় নির্জন হয়ে পড়ে আছে।হঠাৎ কী মনে হল একটা কাগজ টেনে নিয়ে এসে লিখতে আরম্ভ করলাম।
করবী,
আমি জানি না আমার চিঠিটা তুমি কীভাবে নেবে।এটাই তোমাকে লেখা প্রথম,হয়তো
এটাই শেষ চিঠি।তুমি পাশ করার খবর নিয়ে তোমার বাড়িতে ডেকেছিলে।কিন্তু সেই
খবর আমি তোমাকে গিয়ে জানাতে পারলাম না।আমার অকৃতকার্যতার খবর তুমি কীভাবে
নেবে জানি না,কিন্তু আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছি।পরাজয়ে শুরু হওয়া
একটা জীবনের একটা খণ্ড পরাজয়েই শেষ হয়ে গেল।
তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জান না,তুমিও জিজ্ঞেস করনি আমিও বলিনি।
স্টেজের ওপরে কবিতা আবৃত্তি করা একটা ছেলেকে দেখে তুমি একদিন
ভালোবেসেছিলে,সেই ছেলেটির কাছ থেকে কিছুই না পেলেও তুমি অন্তরের কিছুটা
স্নেহ ভালোবাসা পেয়েছিলে এবং সেই ভালবাসার মধ্যেই ছেলেটি অনেক স্বপ্ন
রচনা করেছিল।
তবু স্বপ্ন কি বাস্তব হয়?
তুমি আমি আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখতে পারি,কিন্তু উড়ার জন্য তো দুটো পাখা
চাই।পাখা থাকলেও সেই পাখাতে আছেকেবল বারুদের ধোঁয়ায় চিরদিনের জন্য
পঙ্গু হয়ে যাওয়া একটা হারানো আশা।
তুমি বাবার এনে দেওয়া সুন্দর শাড়িগুলি না পরে মুগার রিহা-মেখেলার মধ্যে
সৌন্দর্য খুঁজে পেতে পার,কিন্তু আমি যে পৃথিবী থেকে এসেছি সেখানে তুমি
কিছুই পাবে না।বাস্তবের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়া মা-বাবা,আমি
হোস্টেলে মাছ-মাংস খেয়ে আরামে থাকার জন্য বাড়িতে উপোস করে থাকা মা-বাবার
সামনে তোমার জায়গাটা একবার কল্পনা করে নাও।
স্টেজে কবিতা পড়া ছেলেটাকে ভালোবাসা যত সহজ,আগামীকাল পথের ভিখারির মতো
ঘুরে বেড়ানো ছেলেকে ভালোবাসা সহজ নয় করবী।
আমার সঙ্গে দেখা হওয়াটা তোমার জীবনের জন্য যদিও একটা দুর্ঘটনা আমার জন্য
চিরস্মরণীয় বোঝাতে না পারা এক অক্ষত স্তম্ভ।একটা সাধারণ দুর্ঘটনার মতোই
আমাকে ভুলে তুমি আবার নতুন জীবন আরম্ভ কর,তার জন্য আমার কোনো আক্ষেপ
নেই।আমার মতো মানুষেরা কেবল একটু ভালোবাসা দিতে পারে,কিন্তু সেই
ভালোবাসাকে ধরে রাখার সামর্থ্য আমার একটুও নেই।
তুমি আমাকে ভণ্ড,ঠক,মিথ্যাবাদী বলতে পার,আমি নির্বাকার ভাবে মেনে
নেব,কারণ আমাদের জন্মই আমাদের শিখিয়েছে কেবল অভিনয় করে যেতে,তাই একেও আমি
আমার জীবনের একটা অভিনয়ের যবনিকা স্বরূপই গ্রহণ করেছি।
তুমি আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলে,’আমার মধ্যেই কি তুমি দীপাকে পেতে পার
না?’ সেদিন আমার কাছে কোনো উত্তর ছিল না।কিন্তু আজ সেই প্রশ্নটিই তোমাকে
আমার আবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে আমাকে কি তুমি দীপার মতো গ্রহণ করতে
পার না?’
দীপা আমার কাছ থেকে কিছুই চায়নি,দীপার মধ্যে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম বন্ধুর
মতো একজন সত্যিকারের দিদির ভালোবাসা। তুমিও কি বন্ধুত্বের ভালোবাসায় আমার
স্মৃতিগুলি ধরে রাখতে পার না?
দীপাকে আমি কিছুই দিতে পারিনি বলে দীপার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই,দীপা
আমার কাছ থেকে কিছুই চায়নি।তুমি যদি আমার কাছ থেকে ভালোবাসার চেয়ে আরও
কিছু দাবি কর ,তা আমি কোনোদিনই দিতে পারব না।চিরদিনের জন্য একটা আক্ষেপ
কেবল থেকে যাবে,যদি তুমি ভালোবাসার চেয়ে আরও কিছু আমার কাছে চেয়ে থাক।
আমার অক্ষমতাকে তুমি ক্ষমা কর।এই চিঠিতোমার হাতে পড়ার আগেই আমি তোমার
কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাব।কিন্তু মন থেকে?সে কথা আমি জানি না।তুমি কেবল
দূর আকাশের একটি তারার মতো জ্বলতে থাকবে এবং সেই তারার স্নিগ্ধ আলোতে আমি
পুনরায় তোমার সঙ্গে নতুন করে দেখা করার চেষ্টা করব।
জীবনে যদি কখনও প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারি পুনরায় আমি ফিরে আসব।তবু এই পথ
অনেক দূর,ততদিন তোমার পক্ষে ধৈর্য ধরা হয়তো সম্ভব হবে না।তাই আমাকে কি
একটা দুর্ঘটনার মতোই ভুলে যেতে পারবে না?
একদিন আমার কবিতাকে ভালোবেসে আমাকে ভালবাসতে শুরু করেছিলে,শেষ বিদায়
নেবার সময়ে তো তোমাকে নিজের মতো করে আমি কিছুই দিতে পারলাম না,তবু তোমার
জন্য কেবল দিয়ে গেলাম কয়েকটি অন্যের কথা,আমার অন্তরের উপলদ্ধিতে তুমি
কেবল তার মধ্যে আমাকে খুঁজে নেবে-
‘I love thee with a love I seemed to lose
With my lost saints I love thee with breath
Smiles tears of all my life
And if God choose
I shall but love thee better after death’

চিরদিনের ভালোবাসায়,তোমার ‘নির’


চিঠিটা সুন্দর করে একটা খামের মধ্যে ঢোকালাম।হঠাৎ কী মনে হল চিঠিটা প্রথম থেকে আবার পড়লাম।পড়তে পড়তে প্রথমবারের মতো আমার দুচোখের কোণ ভিজে গেল।চিরদিন কাঁদতে কাঁদতে হয়তো আমি কাঁদতে ভুলে গিয়েছিলাম,হয়তো আমার চোখের জল শেষ হয়ে এসেছিল।কিন্তু এবার দুই গালের ওপর দিয়ে চোখের জল নেমে এল।আমি মুছে ফেলার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলাম না।হঠাৎ দুফোঁটা চোখের জল
আমার নামটার ওপরে পড়ে নামটা অস্পষ্ট হয়ে গেল। এই নামটা করবী আমাকে দিয়েছিল।করবী একদিন বলেছিল—‘তোমাকে আমি ‘নির’বলে
ডাকব,আমরা তো ছোট্ট একটি ‘নীড়’ তৈরি করার চেষ্টা করছি,তাই না?
সেদিন আমার কোনো উত্তর ছিল না।
আজ এই নামটা,যে নাম হয়তো জীবনে আমি প্রথম এবং শেষ বারের জন্য লিখলাম,আমার চোখের জলে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়াতেও কোনো আক্ষেপ নেই।একটা চির সত্যের মতোই পড়তে না পারা আমার নামটা অনেক সময় ধরে দেখতে থাকলাম।
চিঠিটা লেটার বক্সে দেবার জন্য আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।নিস্তব্ধ হোস্টেলটার বারান্দা পার হয়ে গেটের কাছে এসে পৌছালাম।চারপাশ
নিস্তব্ধ,নিশ্চুপ,সামনে কেবল রাতের অন্ধকার। দীঘলি পুকুরের ঠাণ্ডা বাতাসে আমার শরীরটা একটু কেঁপে উঠল।


সমাপ্ত