বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

আকনবিন্ধীর সোনাপোকা,-- ঙ

(ঙ)

ময়ূর পাখির ডানায় বিচিত্রবর্ণের ডিজাইনগুলি কীভাবে হল ?
খাসি জনশ্রুতিতে সেই সুন্দর বিচত্রবর্ণের শিল্পের ইতিহাস নিহিত রয়েছে।


ময়ূর সূর্যের সঙ্গে জোড়া বেঁধে প্রথমে স্বর্গে ছিল। পাকচক্রে পড়ে ময়ূর অনিচ্ছাসত্ত্বেও পৃথিবীতে এল। প্রিয় জনের অবিহনে স্বর্গে থাকলেও সূর্য ও
বেদনাপীড়িতা হয়ে রইল। ময়ূরের বিরহে সূর্য ওপর থেকে চোখের জল ফেলল। সেই চোখের জল ময়ূরের ডানায় পড়ে বিচিত্র বর্ণের আকার লাভ করল। সূর্য থেকে দূরে থাকলেও সূর্যের প্রতি ময়ূরের ভালোবাসা সর্বকালের জন্য অটুট হয়ে রইল। তাই আকাশে সূর্যোদয় হলে ময়ূর তার রূপসী পাখা মেলে ধরে। তার পেখম দেখিয়ে সূর্যকে সবসময় তার প্রতি অনুরক্তা করে তুলতে চায়। ময়ূরের সাজসজ্জা এবংনৃ্ত্য সূর্যের সঙ্গে তার প্রেমের মনোহর বহিঃপ্রকাশ।
তৎসম শব্দ ময়ূরের সমার্থক খাসি শব্দ ক্লেউ।অস্ট্র-এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠির এই ক্লেউ শব্দের সঙ্গে ময়ূরভঞ্জের অথবা ময়ূরের সোজাসুজি কোনো যোগসূত্র নেই। ময়ূর ভারতবর্ষের বেশিরভাগ প্রদেশের কাছেই পরিচিত তার পবিত্র বলে পরিগণিত ডানার জন্য। কৃষ্ণ ঠাকুর ময়ূরের পুচ্ছ কিরীটীতে গুঁজে অনিন্দ্যসুন্দর রূপ লাভ করে। ময়ূর সৌভাগ্যের প্রতীক বলে বিবেচিত। ময়ূরভঞ্জ চৌহদের পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করা প্রতিটি শিক্ষার্থী এই ধরনের সৌভাগ্যকে অনুধাবন করে। খাসি ভাষা থেকে উদ্ভব না হলেও ময়ূরভঞ্জকে পূর্ব খাসি পাহাড়ের নৈসর্গিক শোভা বিমল বাতাবরণে বিকশিত হওয়ার বিরল অবদান রেখেছে। উত্তর-পূর্ব পার্বত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রস্বরূপ গ্রন্থাগারটি ময়ূরভঞ্জ প্রাসাদে।
উত্তর-পূর্ব পার্বত্য বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বের প্রথম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৩ সনের ২৬ মে কেন্দ্রীয় সরকার সদনের অধিনিয়ম অনুসারে নির্দেশনা জারি করে এবং কার্যত ১৯৭৩ সনের ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারোদ্ঘাটন করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেঘালয় ছাড়াও নাগালেণ্ড,মিজোরাম এবং তখনকার কেন্দ্রীয়শাসিত প্রদেশ অরুণাচলকেও অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ১৯৯৪ সনে নাগালেণ্ড এবং ২০০১ সনে মিজোরাম প্রদেশ নিজ নিজ সীমার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে উত্তর-পূর্ব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরে যায়।
উত্তর-পূর্ব পার্বত্য বিশ্ববিদ্যালয় ,সংক্ষপে নেহু ( NEHU) প্রথম পর্যায়ে ভাড়াঘরে কাজ শুরু করে।বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত দ্রুত শিলঙের দুটি
প্রধান জায়গা লাভ করতে সমর্থ হয়। একটি নংঠুমাইতে অবস্থিত ভূতপূর্ব ময়ূরভঞ্জ মহারাজার গ্রীষ্মকালীন আবাসের চৌহদ এবং অন্যটি লাইমুখরায় থাকা বিজনী রাণীর আবাসের চৌহদ। উমচিং শিলং থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত।মেঘালয় সরকার উমচিঙের ১২২৫ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে উপহার দেয়। অদূর ভবিষ্যতে সবুজ পটভূমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী এবং সম্পূর্ণ চৌহদ নির্মাণ হয়ে উঠবে। ততদিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিকেন্দ্র বিজনী এবং ময়ূরভঞ্জ।


বিজনী চৌহদকে কেন্দ্র করে রয়েছে ছাত্রী আবাস এবং বিজ্ঞান বিভাগের ভবনগুলি।ময়ূরভঞ্জের প্রাণস্পন্দন স্বরূপ গ্রন্থাগারটিকে ঘিরে ধরে বেড়ে চলেছে কলা বিষয়ের বিভাগ গুলি।ইতিমধ্যে উমছিঙে স্থায়ী ভবনের কাজ আরম্ভ হয়েছে।শিক্ষা বিভাগ সেখানে কাজ কর্ম শুরু করে দিয়েছে।ছাত্রীর চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে গারিখানায় আরও একটি ছাত্রীনিবাস ভাড়ায় নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উমছিঙে ছাত্রাবাস স্থানান্তরিত হয়েছে ।ইতিহাস বিভাগ ও স্থায়ী চৌহদে স্থায়ীভাবে বসছে। কিছু দূরে অবস্থিত উমছিঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব যাতায়তের সুব্যবস্থা আছে। এত পরিষ্কার রাস্তাঘাট যে ফুঁ দিয়ে রাস্তায় বসে ভাত খাওয়া যাবে। তবু শিলঙ শহরের মায়া কেউ এড়াতে পারছে না। সন্ধ্যের শিলঙের অপূর্ব সৌন্দর্য থেকে ছাত্ররা নিজেকে বঞ্চিত করে হতাশায় ভোগে। উমছিঙের হোস্টেলে সন্ধ্যের গরম গরম ভাত খাবার জন্য চঞ্চল হয়ে উঠা সন্ধ্যের শিলঙ ওদের বিকেলের মধ্যে ছেড়ে যেতেই হবে।উমছিং এখনও রূপসী শূন্য হয়ে আছে। জনবসতি খুব কম,চৌহদের নির্মাণ কার্য এখনও সম্পূর্ণ হয়ে উঠেনি। তাই উমছিং ছাত্রীনিবাস তৈরি হয়ে গেলেও নিরাপত্তার কথা ভেবে ছাত্রীদের হোস্টেলে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।ছাত্ররা ইউনিভার্সিটির বাসে
সকালেই ময়ূরভঞ্জে আসে এবং সন্ধ্যেবেলা ফিরে যায়। প্রতিদিন বিকেলে শিলঙের গায়ে লেগে থাকা ময়ূরভঞ্জ। এই চৌহদে কেবল দুটো
ছোট ছোট ছাত্রাবাস নির্বাচিত কিছু ছাত্রদের জন্য লং ভিউ এবং শর্ট ভিউ। এই কয়েকটি ছাত্র ছাড়া বাকি ছাত্ররা সকাল বিকেল বাসের যাত্রী। কখনও বা পোলো গ্রাউণ্ড দিয়ে,কখনও গলফ লিঙ্ক হয়ে বাসের শেষ ঠিকানা স্থায়ী চৌহদ।
কেবল ময়ূরদের স্থায়ী চৌহদে চলে যেতে হয়। ময়ূরীরা থেকে যায় বিজনী গারিখানা এবং সুন্দর শহরের উচ্ছল হোস্টেলগুলিতে।সেটাই স্থায়ী চৌহদের ছাত্রাবাসের মিলিত আপত্তি –কী দোষে ময়ূরদের এই স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নির্বাসন দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন? সূর্যের কাছ থেকে ময়ূর পাখির
বিচ্ছেদের কাহিনিটা ওদের কাহিনি হয়ে পড়ে। ওরা সবাই ময়ূর পাখি।রাতের জন্য সূর্যের কাছ থেকে নির্বাসিত।প্রভাকরের মতে,এই উমছিঙ আর কিছু নয়,লেণ্ড অফ কনভিক্ট।
মিপুনের মতে কালাপানিতে মেলা।
কথাটা সত্যি। স্থায়ী চৌহদে কী আছে ? চোখ জুড়ানো শিলঙ শহরের শান্ত শোভা তাতে নেই। আপেলের মতো দেখতে স্কুলের ছোট ছোট শিশুরা সকাল বেলাতেই প্রাণ দেওয়ার ব্যস্ততা নেই।বিকেলে পশ্চিমী সঙ্গীতে সঙ্গত করা পুলিশ বাজারের হাতছানি নেই।পানিগ্রাহী,ডাউলাগাপু,মৃগাঙ্ক এবং প্রভাকরের রূপসী হার্টথ্রবগুলি নেই। স্থায়ী চৌহদে মোটেই নেই, নেই আর নেই।
সন্ধ্যের আগে আগে দীর্ঘ রাস্তাটা পার হয়ে এসে হোস্টেলে ঢুকবে।কারণ ?রাতের বেলা পথটা বিরোধিতার ভাষা পরিবর্তিত করে।মৃগাঙ্ক রাতের জন্য রাস্তাটার একটা নাম রেখেছেঃ হসটাইল রোড। ‘হসটাইল রোড’ যদি এড়িয়ে চলতে চাও,আলো থাকতে থাকতে ফিরে আসবে।স্থায়ী চৌহদের ইটালির স্থপতি শিল্পী নক্সা করা ‘লিনিং ওয়াল কাম রুফ’এর সুন্দর ঘরগুলির নির্মাণকার্য দেখবে।বই সর্বস্ব রাতটা কাটাবে।আর সকালবেলা গম্ভীরমুখের অধ্যাপকদের সঙ্গে বাসে ময়ূরভঞ্জে যাবে।
মুখে হা-হুতাশ করলেও ছাত্ররা জানে,স্থায়ী চৌহদে বিশাল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে রয়েছে।রসিক জয়ন্তীয়া বা ড’ই অনুজদের উৎসাহ দিয়ে বলে,ময়ূরীরাও আসছে। আসছে। হতাশ হয়ো না। স্থায়ী চৌহদে স্থায়ী সম্ভাবনা এবং স্থায়ী ভবিষ্যৎ।আজকের লেণ্ড অফ কনভিক্ট শীঘ্রই ‘অল্টার অফ নলেজ’হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এখানে একদিন জ্ঞানের ভাণ্ডার গড়ে তোলার জন্য সবাই একত্রিত হবে।বিস্তীর্ণ সবুজ মালভূমিতে স্বাস্থ্যবান গাছকে বলি দেওয়া মেসিনগুলি সেই কথাই নিশ্চয় বলছে।বলির পরে মৃতদেহের মতো নির্জীব হয়ে পড়ে থাকা কাঠগুলি তুলে নেওয়া সারি সারি ট্রাকগুলি একাধারে সেই কথাই তো ঘোষণা করে চলেছে।
জ্ঞানবৃক্ষ রোপণের জন্যই সবুজ বৃক্ষের বলিদান। বাসের জানালা দিয়ে নীরবে গাছগুলির বলিদানকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখছে বিকেন শর্মা।রাষ্ট্র নির্মাণের জটিল প্রক্রিয়ায় তার মাতৃভূমি মণিপুরেও বলি দেওয়া হয়েছে সুঠাম যৌবনকে।একদিকে সন্ত্রাসবাদের অস্ত্র,অন্যদিকে সামরিক
বাহিনির সুরক্ষা আইনের নৃশসংতা রক্তাক্ত করা তার জন্মভূমি এখন সুবিধাবাদের স্বর্গ।অহর্নিশি চাপ,প্রতিরোধ করতে করতে প্রজন্ম সুস্থ স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে। শিল্পীসত্তা সুস্পষ্ট ভবিষ্যতের ছবি লালন-পালন করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে রাখার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছে।
মাঝে মধ্যে সে নিজেকে পলায়নবাদী বলে মনে করে। শিক্ষা গ্রহণের নামে সেও তো মাকে একা ছেড়ে এসেছে।হ্যাঁ,মা ও তাকে দূরে পাঠিয়েছে।বুকে পাথর রেখে নিজে থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।এখানে তার থাকার প্রয়োজন নেই। দুই কাঁধে দুই বন্দুক আর দুর্নীতির ফাঁদে মণিপুরের ভবিষ্যৎ।মণিপুরে কী পড়াশোনা করবে? স্কুলগুলিতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রিয় পাত্ররা চাকরি পায়।তারা অসমের জাতীয়তাবাদের মন্ত্র জপ করা নেতাদের মতোই নিজের ছেলেমেয়েদের দিল্লি-মুম্বাই,দার্জিলি,মুসৌরির স্কুলগুলিতে পড়ায়। বছরের আটমাস দিল্লি-মুম্বাইর নিজের ফ্ল্যাটগুলিতে সপরিবারে বাজার-টাজার করে কাটায়।স্কুলের চাকরি মণিপুরে পচতে থাকে। বেতন নিজে থেকে জমা হয়ে যাবে।ইচ্ছা হলে দুই চারজন আবার নিজের চাকরিটা চালিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ঠিকা দেয় ব্যক্তিগতভাবে নিজের পছন্দের মানুষকে।কখনও কখনও যোগ্যরা ঠিকা
পায়।বেশিরভাগই অযোগ্য।

যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক,রাজনৈতিক নেতা চাটুকারদের চাকরি দেয়।যোগ্য হোক বা না হোক,শিক্ষয়িত্রী নিজের বেতনের কুড়ি শতাংশ দিয়ে নিজের পছন্দের মানুষকে চাকরি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঠিকা দেয়। সন্ত্রাসের বাণিজ্য রুদ্ধ করার সদিচ্ছা সর্বসাধারণ ছাড়া অন্য কারও নেই।আর সর্বসাধারণদের পথ কে দেখাবে? সন্ত্রাসের রাজনীতি এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের খামখেয়ালি জন্ম দেওয়া দুর্নীতির বায়ু সেবন করে বড় হওয়ার চেয়ে মায়ের বুক খালি থাকবে।সে দূরে থাকুক,ভালো থাকুক।
শিলঙের কাছে বিকেন শর্মা কৃতজ্ঞ।তুলনামূলকভাবে এই জায়গার শান্তশ্রী,সুস্থির বাতাবরণ এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গি তার কিংকর্তব্য বিমূঢ়
হওয়া সৃজনীকে উজ্জীবিত করে রেখেছে।দুই বিপরীত মুখী চাপে জীবনের জয়গান গাওয়ার জন্য দ্বিধাবোধ করা শিল্পীপ্রাণকে আশ্রয় দিয়েছে শিলঙ।
আর তার জন্মভূমিতে? সামনের দরজায় রাষ্ট্রের বন্দুকের নল,পেছনের দরজায় সন্ত্রাসবাদীর বিদেশি বন্দুকের নল।মাতৃভাষায় সেখানে কবি নিজের অগ্রাধিকার ঘোষণা করে কবিতা লিখেছেঃমারবেই যখন দেশে নির্মিত বন্দুক দিয়েই মার।
শোষণ এবং সন্ত্রাস,দুর্নীতি এবং ভ্রষ্টাচার,মানুষের মৌ্লিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের কুটিল অধিকারের আরণ্যক বিরোধিতা বধ্যভূমিতে রূপান্তরিত করা তার মাতার,তার মানুষের ভাষা হতে পেরেছে কি তার কবিতা? যথার্থ অর্থে? অনেক সময় সে নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়।অনেকবার সে নিজেকে দোষী সাব্যস্থ করে।বেশিরভাগ সময় সে নিজেকে গৃহহারা যেন অনুভব করে এবং সেই ধরনের অনেক জটিল ক্ষণে শিলঙ তাকে নিজের বলে জড়িয়ে ধরে উদারতার পরিচয় দিয়েছে।
বিকেন শর্মাকে গম্ভীরভাবে বসে থাকতে দেখল বা ড’ই। নিজে বয়সে ছোট হলেও সে বিকেনকে ছোট বলে মনে করে।উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার সময়েই বা ড’ই ঘর জামাই হওয়া একজনকে ধরে সংসার আরম্ভ করেছে।মানুষটা পুরোপুরি সংসারী,খেত-মাটি দেখাশোনা করে তাকে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছে।সংসার থেকে দূরে থাকলেও সে যেখানে সেখানে তারই প্রতিফলন দেখে।বিকেনের মধ্যে সে সংবেদনশীল কবির সঙ্গে নির্ভেজাল বন্ধুকে দেখতে পায়।
চলন্ত বাসে এগিয়ে এসে সে বিকেনের পাশের সিটটাতে বসে পড়ে। বিকেন কাটা গাছগুলি থেকে চোখ ফিরিয়ে বা ড’ইর দিকে তাকিয়ে হাসল।স্মিত হাসি।সে খাসিয়াদের প্রকৃতি প্রেমের কথা বলতে লাগল।স্থায়ী চৌহদের নির্মাণ কার্য আরম্ভ করার সময়েই এই অঞ্চলের বাসিন্দারা সমস্ত প্রক্রিয়াটির বিরোধিতা করেছিল। ভবন নির্মাণ এবং রাস্তা জরীপের কাজে আসা,বিশেষ করে যারা খাসি নয় তাদের ,শ্রমিকদের বাসিন্দারা ‘দখার’ বলে গালিগালাজ করার কথা সবাই জানে।দীর্ঘ লম্বা রাস্তাটা চওড়া করার জন্য দুপাশের বনানী ধ্বংস করা হয়েছে,স্থায়ী চৌহদের ১২২৫ একর মাটির গাছ গাছ নষ্ট করেছে।নিশ্চয় সহজ সরল মানুষগুলি এটাকে মেনে নিতে পারেনি।এর সঙ্গে অবশ্য অন্যান্য ব্যাপারগুলিও
কাজ করেছে।যাই হোক না কেন,সরকারি এবং বেসরকারি,দুই ধরনের সতর্কীকরণ এবং আলোচনার শেষে অন্ততঃ প্রতিরোধ কিছুটা কমেছে।তবু প্রতিরোধের দুই একটি বিচ্ছিন্ন ভাষা শিলঙ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী চৌহদের পথে দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রতিবাদ সাব্যস্থ করে।
জ্ঞানের জ্যোতিতে আলোকিত করার জন্য বিশাল বিশাল গাছগুলিকে মাটিতে উপড়ে ফেলার জন্য প্রকৃতি মাতার অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি?সবুজ প্রাচুর্য ধ্বংস করে যে অপরাধ করেছে,তার ক্ষতি কীভাবে পূরণ করবে?প্রকৃতি মা অসন্তুষ্ট হবে না কি? কা ম্যেইবিল্যাংগ আই,তুমি যেন তোমার সবুজ গাছ কেটে জ্ঞানবৃক্ষের চারা রোপণ করার জন্য,প্রতিপালন করার জন্য আমাদের অনুমতি দাও এবং আশিস প্রদান কর।


কবি য়ু চোচো থেম বলেছেন-
Once again the tree will sound
Once again the rocks will move
Like in the past the days will come
In another way the land will mature
If we have ears to listen
To what mother earths has to say.


বাস স্থায়ী চৌহদের কাছে চলে এসেছে।বিভাগীয় ভবনগুলির নির্মাণের কাজ চলছে।নক্সাগুলি অনুমান করা যাচ্ছে।বিশাল প্রেক্ষাগৃহের কাজ শেষ হয়ে গেছে।পাশের জঙ্গল থেকে ঝিঁঝি পোকা গান বন্ধ করে কান খাড়া করে থমকে রয়েছে,রঙবেরঙের রূপসীদের হাসিগুলি কাছে চলে এসেছে নাকি?কে জানে হয়তো আজ অডিটোরিয়ামে কিছু উৎসবের আয়োজন করা হবে।স্থায়ী চৌহদ সবাইকে বরণ করে নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।শুরুর দুই একটি ছোটখাট প্রতিরোধ একটা সময়ে অত্যন্ত স্বাভাবিক বলেই পরিগণিত হবে।প্রতিটি যাত্রার ইতিহাসে প্রতিরোধ এক একটি
মাইলস্টোন।এমনকি আজকের প্রতিরোধের ভাষা আগামীকালের বরণ করে নেবার উৎসাহ হতে পারে।কেননা পাহাড় বড় উঁচু।উঁচু মানেই আকাশের কাছাকাছি।আকাশ মানেই উদার প্রসারিত দুই বাহু। ইতিমধ্যে বাস এসে ছাত্রাবাসের সামনে দাঁড়িয়েছে।অধ্যাপকদের বাসগৃহগুলি
কখন পার হয়ে এল ,কখন তারা নেমে গেল-কথায় মশগুল হয়ে থাকায় বা ড’এবং বিকেন জানতেই পারল না।
এখানে একদিন গারিখানার ছাত্রীনিবাসগুলিও স্থানান্তরিত হবে।খুব শীঘ্রই ডঃঝুনঝাপ্পার ক্ষুদ্র ভারতবর্ষ এখানে নতুন করে গড়ে উঠবে।ছাত্রীদের আলাদা আলাদা রুম। ডঃঝুনঝাপ্পা বিভাগীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রুমমেট নির্বাচনের জটিল অঙ্ক থেকে রেহাই পাবেন।
বিজনী চৌহদ ঘিরে থাকা অভিজাত বাসিন্দারা বিজনী চৌহদ থেকে সরে যাওয়া অনুভব করবে কি?কোনো ঠিক নেই।একটা কথা কিন্তু ঠিক যে তারা প্রাণোচ্ছল আবাসিনীদের কলরবের অভাব নিশ্চয় অনুভব করবে।


আর ময়ূরভঞ্জ?